গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘর যেমন পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা তেমন পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের মনও। এই শীতেও মাথার উপর কোনো রকম ছাওনি ছাড়াই রাত কাটানো আর কোনোরকমে খোলা আকাশের নিচে দুটি চাল ফুটিয়ে জীবন যাপন করা মানুষগুলোর জন্য খানিকটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি।
সাইফুল আলম শামীম, সৈয়দ মাহমুদুল হক, শিবলী সাদিক কচি, হরিপদ রায়রা ওখানে গিয়েছিলেন। সেখানে সবার প্রশ্ন- আপনারা কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে আসছেন?
কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে নয়, আমাদের বন্ধুদেরই এই উদ্যোগ- সাইফুল আলমের মুখে একথা শুনতেই তাদের মন্তব্য, আমাদের পাশে তাহলে দেশের লোকও আছে। আমরাও তাহলে এই দেশেরই। আমরাও এখানে থাকতে পারবো।
গত ১৯ নভেম্বর বন্ধুদের উদ্যোগে সারাদিন গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের সঙ্গে কাটিয়েছেন সাইফুল আলমরা। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানান- ওখানে দুস্থ ১২০টি পরিবারের মানুষগুলোর জন্য কম্বল, কয়েকদিনের খাবারদাবার আর আহতদের কিছু আর্থিক সহায়তা দিতে পেরেছি আমরা। সারাদিনের ওখানে কাজ করেছে একটি মেডিকেল টিম, ছিলো ওষুধপত্রের ব্যবস্থাও।
সাইফুল আলম শামীম চ্যানেল আই অনলাইনকে আরো বলেন, আমাদের কানাডাপ্রবাসী বন্ধু কাজী মামুনেরই মূল উদ্যোগ। পরে বাংলাদেশের দিকটা কো-অর্ডিনেট করেছি আমি। একটা বিষয় হলো আমরা সবাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। এর আগে পত্রিকা পড়ে ও টিভি দেখে অনেক তথ্যই জেনেছি। কিন্তু সামনে গিয়ে আরো বেশি কাছে থেকে স্বচক্ষে দেখে এসেছি তাদের দুরাবস্থা।
এক ফেসবুক পোস্টে প্রবাসী কাজী মামুন লিখেছেন, এই কাটাতারের বেড়া শুধু কাটাতারের বেড়া না মানবতার প্রতিবন্ধকও। অল্প কিছুদিন আগেও ওদের যেমনই হোক একটা করে ঘর ছিল। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল। একদিনের মধ্যেই সবকিছু উচ্ছেদ করে ঘর বাড়ি পুড়িয়ে ওদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা এ কাজ করেছে তাদের কী শাস্তি হবে বা আদৌ কোনো শাস্তি হবে কিনা জানা নেই। তবু আমাদের সীমিত সামর্থ দিয়ে লোকগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরেছি এটাই বা কম কিসে!
নির্মাতা সাইফুল আলম ওখানে বেশ কিছু ফুটেজও নিয়ে এসেছেন। দ্রুতই সেটা দিয়ে তৈরি হবে কোনো ডকুমেন্টারি। তবে এখন সাইফুল আলমদের চাওয়া একটাই, এই মানুষগুলো আবার তাদের অধিকার ফিরে পাক।
গত ৬ নভেম্বর উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের উপর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে শ্যামল হেমরম ও মঙ্গল মার্ডী মারা যান।