চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সহিংসতা ত্যাজ্যের পথ ধরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তাগিদ

গত দুটি বছরই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিলো সারাদেশ। পেট্রোল বোমা এবং হরতাল অবরোধের চাপে পড়ে ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এবার ৫ জানুযারি সেই হিসেবে অনেকটাই স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ। পরিস্থিতি দেখে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সহিংসতার রাজনীতি থেকে ফিরে আসছে বিএনপি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, এবছর ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনা খুব কম। কারণ সহিংসতার রাজনীতি যারা করতো তারা বুঝতে পেরেছে এই রাজনীতি দিয়ে বেশিদিন চলবে না।

‘সহিংসতা দমনে অবশ্য বর্তমান সরকারেরও ভূমিকা আছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে যেমন বেশ কিছু কর্মসূচী নিয়েছে তেমন সেসব বাস্তবায়নও করেছে। তাতেই সহিংস সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে,’ বলে মনে করেন এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

একই কথা বলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজ এর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. সুলতান হাফিজ রহমান। তার মতে, জনগণ যে এসব সহিংসতায় সাড়া দেবে না তা বিএনপি বুঝতে পেরেছে। আর মানুষ সবসময় নিজের ভালো চায়।

‘দেশে এখন একটা উন্নয়নের জোয়ার চলছে, সহিংসতার কারণে সেসব অনেকটাই স্তিমিত। তাই এসব সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে সরে না আসা পর্যন্ত যে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারবে না বিএনপি তা টের পেয়েছে,’ বলে মনে করছেন তিনি। 

মধ্যবর্তী নির্বাচনের তাগিদ
তবে বশির আহমেদ মনে করেন, সরকার নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সহিংসতাকে নিয়ন্ত্রণ করলেও যতদিন না মানুষ মুক্তভাবে তার মত প্রকাশ করতে পারবে ততদিন গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি নিশ্চিত হবে না।

‘সুতরাং এখন আওয়ামী লীগেরও উচিত একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের আয়োজন করা। আর এদেশে অন্য কোনো রাজনৈতিক পন্থা মানুষ দীর্ঘদিন মেনে নেবে না। এদেশের মানুষ গণতন্ত্র পছন্দ করে। তারা নিজের মত প্রকাশ করতে, ভোট দিতে পছন্দ করে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন: সংসদে এখন বিতর্ক নেই। সরকার যা বলে তাই হয়। বিরোধী কোনো মত নেই। জনগণ কিন্তু ওই বিরোধী মতটা চায়।

‘তাই গণতান্ত্রিক চর্চা ছাড়া দেশে রাজনৈতিকভাবে স্থায়িত্ব লাভ করা যাবে না।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুলতান হাফিজ রহমানও মনে করেন, দেশের মানুষের মনে থাকা হতাশা দূর করতে এবং দেশের উন্নয়নের জোয়ারে আর একবার গতি সঞ্চার করতে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করতেই হবে। তবে কোন বিষয়ে দেশের সব মানুষ সহমত হবো এবং কোন বিষয়ে বিতর্কে জড়াবো, তা জানতে হবে।

‘স্বাধীনতা বিরোধীরাতো দেশের বাইরের শত্রু। তারা ছাড়া দেশের সব মানুষের কিছু বিষয়ে, বিশেষ করে দেশ বিষয়ে সহমত হতেই হবে।’

জামায়াতকে ছাড়ছে বিএনপি?
সহিংসতার রাজনীতির পথ থেকে সরে আসার মধ্য বিএনপি কি জামায়াতের হাতই ছাড়লো? এমন প্রশ্নে বশির আহমেদের বক্তব্য: বিএনপি এর আগে যতগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মাশুল তারা দিয়েছে। তবুও জামায়াতের সঙ্গ মনে হয় না বিএনপি ছাড়তে পারবে।

‘জামায়াত এখন অনেক দুর্বল। এখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আমরা টের পাচ্ছি না। জামায়াত যদি নিষিদ্ধও হয় তাহলেও তারা নাম বদলে বিএনপির সঙ্গেই থাকবে,’ বলে বশির আহমেদ মনে করছেন। 

তবে এ ব্যাপারে এখনই বক্তব্য দেওয়া মুশকিল বলে মনে করেন সুলতান হাফিজুর রহমান। তার মতে, পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলো, সহিংস কর্মসূচীও এখন তারা দিচ্ছে না। তবু নিশ্চিত করে এখনই বলা কঠিন। কিন্তু, পুরো জাতি আজ আশা করে জামায়াতের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হবে বিএনপি।