নির্বাচিত হলে সরকারের সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে এফবিসিসিআই কাজ করবে বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি প্রার্থী বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা তাতে এফবিসিসিআই অংশীজন হিসেবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
করোনাকাল, অর্থনীতি, এফবিসিসিআইসহ নানা বিষয় নিয়ে চ্যানেল আইকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানজিদা পারভীন। প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন রাজু আলীম।
ওই সাক্ষাতকারে মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার ঘোষিত ভর্তূকি এবং প্রণোদনা এখনও সঠিকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যক্তাদের হাতে পৌঁছায়নি। সেজন্য পলিসি লেবেলে আলোচনা করে তড়িৎ গতিতে সহায়তা পৌঁছানো উচিৎ বলে মনে করেন মোঃ জসিম উদ্দিন। একটি অংশগ্রহনমূলক এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এফবিসিসিআই এর পরিচালনা পর্ষদের ২০২১-২৩ মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। মনোনয়ন জমা দিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উপহার দিতে অঙ্গীকার করেন। করোনার কারণে লোকাল ব্যবসায় ঠিক ততটা প্রভাব না পড়লেও রপ্তানী-আমদানিমুখী ব্যবসায় এর প্রভাব বেশ চোখে পড়ার মতো। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা ভাবনার কারণে ততটা বিপদের মুখে পড়েনি শিল্পখাত বলে মনে করেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক এ নেতা।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন চ্যানেল আইকে বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই অতিমারীর কারণে অন্যান্য দেশকে অর্থনীতির পাশাপাশি খাদ্য সংকটকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যোগ্য নেতৃত্বের কারণে খাদ্য সংকটে পড়েনি বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সবগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান করোনার দ্বিতীয় ধাপ কিভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে তা নিয়ে আমাদের নীতি নির্ধারকদের ভাবতে হবে বলেও মনে করেন অভিজ্ঞ এ ব্যবসায়ী নেতা।
নিজের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরীগুলিতে নিজেরাই মাস্ক তৈরি করে শ্রমিকরা ব্যবহার করছে। স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অফিসগুলিতে ৫০% লোক দিয়ে অফিসে কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫০% অফিসে, ৫০% বাড়িতে থেকে কাজ করছে। সমস্য হলো কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না, শিপমেন্টে নানান সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রভাব পড়ছে খুচরা মার্কেটে। এসব নিয়েও ভাবতে হবে বলে জানান মোঃ জসিম উদ্দিন।
এনবিআর বিষয়ে কৌশলী এ নেতা বলেন, ভ্যাট ইস্যুতে ১০০% ডিজিটালাইজড করাটা এখন সময়ের দাবি। এটা করা গেলে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে এবং এনবিআর-এর ভ্যাট কালেকশনে আর কোন বেগ পেতে হবে না। বাজেটে লোকাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে প্রটেকশন দেয়া দরকার। ইমপোর্ট সাবস্টিটিউট আইটেমগুলোর প্রোডাকশন যাতে বাংলাদেশে হয়, সেজন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
সরকারের লক্ষ্য অর্জনে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করে কাজ করারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সেই সাথে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর মাঝে ঐক্য সুদৃঢ় করা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির বিকাশ ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের নিয়ে একত্রে কাজ করা, দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও শক্তিশালী করার এই যাত্রা আরও বেগবান করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান অত্যন্ত কৌশলী এ নেতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এবং ভিশন ২০৪১ ও একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন নতুন সম্ভাবনায় প্রতিনিয়ত সাড়া দিয়ে এক নির্ভয় দূরদর্শী নেতৃত্ব সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের অর্থনীতি। এ ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে আগামী দিনে মনোযোগ দেয়াটা এখন সময়ের দাবি। সে কারণেই দেশের সব স্তরের ছোট-বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে পারলেই অর্থনীতি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
সংগঠনটির সাবেক এই সহ-সভাপতি বলেন, করোনা মহামারীর এই বাস্তবতায় আমরা ভালো আছি। অর্থনীতিও ভালো করছে। এখন সামনের দিনগুলোতে নীতি প্রণয়নে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্কোন্নয়ন ও গভীরতর করতে পারে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যবসায় হাতেখড়ি নিয়ে খ্যাতনামা শিল্পদ্যোক্তায় পরিণত হন মো. জসিম উদ্দিন। দেশের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যবসায়ী নেতা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে ব্যবসা ছড়িয়েছেন- গণমাধ্যম, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, আবাসন, সিমেন্ট, ইলেকট্র্রনিকস, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, ট্রেডিং, তৈরি পোশাক ও পশু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বহু খাতে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিপিজিএমইএ সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অর্থনীতিতে অবদান রেখে একাধিকবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব- সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও জিতেছেন একাধিকবার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন ৫৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা।
এফবিসিসিআই’র এই সভাপতি প্রার্থী মনে করেন, এফবিসিসিআইর আগামী নেতৃত্বকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই অধিভুক্ত সারা দেশের সব চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনসমূহের আর্থিক এবং সাচিবিক সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেতে সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন। বাজেটে এফবিসিসিআইর সুপারিশ বাস্তবায়নে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে বেসরকারি খাতের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে ব্যবসায়ী, একাডেমিক এবং থিংক-ট্যাংকদের নিয়ে একটি বিশ্বমানের দরকষাকষি কমিটি গঠন করতে হবে।
তিনি মনে করেন, এফবিসিসিআই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত এবং যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের সংগঠনই এফবিসিসিআই হতে হবে। আর মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তত ১ হাজার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
এক্ষেত্রে এফবিসিসিআইকে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে হবে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এফবিসিসিআইকে এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করছে। আমাদের এই সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমাদের কাস্টমস ও পরিবেশের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পলিসি করতে হবে, তা না করা গেলে শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয়ভাবে বিক্রির জন্য পণ্য বের করতে হলে বিদেশ থেকে আনার সমান ট্যাক্স দিতে হবে। যদি সেটা করা হয়, তাহলে স্পেশাল ইকোনমি জোনে কেউ যাবে না। তার মানে ওই জায়গাতে আমাদের কাজ করতে হবে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই শিল্পায়ন হবে। এ মুহূর্তে সেবা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। সেবা খাত নিয়েও কাজ করতে হবে। দেশ যখন মধ্যম আয়ের হয়, তখন সেবা খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারের সহায়ক হাত হিসেবে এফবিসিসিআই কে গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। তাই বেসরকারী খাতকে সরকারের পরিকল্পনার সাথে সংহত করার জন্য এফবিসিসিআইয়ের উচিত সেগুলি বাস্তবায়নে সহায়তা করা।