চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সম্মাননা পেলেন দেশের দুই মূকাভিনেত্রী

বাংলাদেশে মূকাভিনয়ের ক্ষেত্রটি আজ অবধি খুব বেশি প্রসারিত হয়নি। আর নারীদের মূকাভিনয়ে আসাটা বিগত কয়েক বছর আগেও ছিলো কাল্পনিক ব্যাপার। সেই কাল্পনিক ব্যাপারটি এখন বাস্তবায়ন করেছেন মৌসুমী মৌ এবং সাদিয়া আফরিন।
নানা কাজের ভিড়ে #মূকাভিনয়কে লালন করে যাওয়ার স্বীকৃতি পেলেন এই দুই জন #মূকাভিনেত্রী। গত ১ ও ২ মার্চ বীর চট্টলা মূকাভিনয় উৎসব-২০১৯ এর প্ল্যাটফর্ম মনোমাইম বাংলাদেশের আয়োজন থেকে তাদেরকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সহ-সভাপতি মৌসুমী মৌ। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে মূকাভিনয় চর্চা করে আসছেন। ২০১৪ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সদস্য হিসেবে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ শিরোনামের একটি প্রযোজনায় মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তার এ অঙ্গনে যাত্রা শুরু। এরপর দেশে এবং দেশের বাইরে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মূকাভিনয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন মৌসুমী।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের অন্যতম প্রযোজনা ‘লাইট ভার্সেস ডার্কনেস’–এর মূল নারী চরিত্র হাওয়া’র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ–সহ ভারতের দিল্লীতে লাইট ভার্সেস ডার্কনেস প্রদর্শিত হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় পরিবেশনা ‘অস্বীকৃতি’। যার মূল চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী মৌ। লেখক আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি মূকাভিনয় প্রযোজনায় মায়ের ভূমিকায় ছিলেন। অভিনয় করেছেন স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে নির্মিত ১০টি স্কেচ মাইম প্রযোজনায়।
তার সম্প্রতিক একক প্রযোজনা ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’। বর্তমান বিশ্বের আলোচিত ইস্যু ‘মিটু’ আন্দোলন নিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও আত্মহত্যা বিরোধী মূকাভিনয় প্রযোজনা হ্যাশট্যাগ মিটু। ঢাকা, রংপুর এবং ভারতের কলকাতার নন্দনে ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’র এ পর্যন্ত ৩টি প্রদশর্নী হয়েছে। এছাড়াও মৌসুমী মৌ গত বছর চীনের কুনমিং শহরের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালে’ মূকাভিনয় পরিবেশন করেন।
তিনি ২০১৬ সালে ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাস্কৃতিক উত্সবে মূকাভিনয়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য। মৌসুমী প্রথম আলো বন্ধুসভা ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক। পড়ালেখাতেও সমানতালে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব দেখিছেন মৌসুমী।
সম্মাননা প্রাপ্তি প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘সম্মাননা প্রাপ্তির যে আনন্দ তা কখনোই শব্দচয়ন বা কথায় ব্যক্ত করা যায় না। মূকাভিনয় আমার প্যাশন, ভালোবাসা ও স্বপ্নের জায়গা। আমি মনে করি মূকাভিনয়ে আমার যাত্রা কেবল শুরু। এখনও বহুদূও যেতে হবে। এই সম্মাননা প্রাপ্তি আমার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিলো।
তার সঙ্গে সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যজন হলেন চট্টগ্রামের অনাদিকল্প মূকাভিনয় দলের সাদিয়া আফরীন। সাদিয়া আফরীন চট্টগ্রামের মূকাভিনয় অঙ্গনে একটি পরিচিত নাম। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের রাজা ও রাজদ্রোহী নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে মঞ্চাভিনয়ের শুরু হলেও তিনি প্রথম মূকাভিনয় করেন ২০১১ সালে অনাদিকল্পের ‘তৃতীয় বিশ্ব’ মূকনাটকে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে রচিত এই মূকনাট্যে ‘ফেলানী’ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর অনাদিকল্পের আরেকটি মূকনাটক ‘প্রকৃতি ও পুরুষের গল্প’-এর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।
নিজের সম্মাননা পাওয়া নিয়ে সাদিয়া বলেন, ২০১১ থেকে মূকাভিনয় শুরু করে এখন পর্যন্ত যে পরিশ্রম করেছি তার স্বীকৃতি কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়ে বহুবার পেলেও এই সম্মাননা সেই স্বীকৃতিকে পূর্ণতা দিয়েছে। পাশাপাশি মূকাভিনয় নিয়ে কাজের আগ্রহ ও দায়বোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।