বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে হাজার বছর ধরে কয়েকটি ধর্মের লোক একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর ভর করে গড়ে উঠেছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কিন্তু হঠাৎ করে গত এক দশক যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ধর্মীয় সহনশীলতা কমে আসছে এই জনপদের মানুষের। সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা লালন করলেও এক শ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী দিনে পর দিন একটি বিশেষ ধর্মকে উদ্দেশ্য করে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এইসব উসকানিতেই সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত সোমবার দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। মামুনুল হককে নিয়ে ঝুমন দাস (২৮) নামের নোয়াগাঁও গ্রামের এক যুবক ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বুধবার সকালে আশপাশের শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ লাটিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন নদীর তীরে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালায়। যদিও ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে র্যাব প্রধান ওই এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় ২২ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নোয়াগাঁও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এই ধরণের হামলা ন্যাক্কারজনক। বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে একটি মহল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বকে বহির্বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটানো হলো যখন বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, পালন করছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী।
বিশ্ব নেতারা এখন বাংলাদেশে এসে এখন বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করছে। সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলাদেশ যখন অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নতির শিখরে উঠে যাচ্ছে, তখন পেছন থেকে ছুরি মারার মত এই ধরণের অপকর্ম ঘটানো হচ্ছে। আমরা আশা করবো সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দ্রুতই এই ব্যাপারে আরও কঠোর হয়ে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। নতুবা এই ধরণের ঘটনায় আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষতি করবে যা ভবিষ্যতে প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
আমরা চাই শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ যেন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যেতে পারে ইতিহাসের পাতায়।