প্রশান্ত গ্রামের সহজ সরল মেধাবী ছেলে। তার মায়ের একমাত্র অবলম্বন। সে তার চিকিৎসক হবার স্বপ্নপুরণের পথে একধাপ পেরিয়ে যায়। অন্যদিকে গ্রামের চঞ্চল দাপুটে কিশোরী শান্তা। ভাই-বোনের মতোই প্রশান্ত আর শান্তার সুন্দর সরল সম্পর্ক। কিন্তু এই সহজ সুন্দর সম্পর্ককে ভিন্ন ধারায় ধাবিত করে মিল্টনের একটি কারসাজি।
উন্মুক্ত তথ্য প্রযুক্তির যুগের প্রতিনিধি প্রশান্ত তার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার সাফল্য-আনন্দ ফেসবুকে শেয়ার করে-মাকে জড়িয়ে তার ছবি আর বাবার জন্য তার আবেগ প্রকাশ পায় ফেসবুকের দেয়ালে। অন্যদিকে শান্তার দৃঢ় প্রত্যাখ্যানে ক্ষিপ্ত মিল্টন প্রযুক্তির কারসাজিতে প্রশান্ত ও তার মা’র ছবিকে বদলে ফেলে প্রশান্ত আর শান্তার ছবিতে। মিল্টনের বিকৃত রুচি আর মূল্যবোধের অবক্ষয় সহজ সুন্দর সম্পর্কটিকে করে দেয় কলুষিত। মুহূর্তের মাঝে সম্পর্কের সারল্য বন্দি হয়ে যায় হিন্দু মুসলিম “অবৈধ সম্পর্কের” চিরচেনা জটিল সমীকরণে। গ্রামবাসীর বিভাজন, ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই না করেই অহেতুক এবং অস্থির প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটায়। যা আমাদের বর্তমান সমাজের নিত্য নৈমত্তিক চিত্র।
গুজবকে কেন্দ্র করে কারো ব্যাক্তিগত রোষ কত বড় দাবানল সৃষ্টি করতে পারে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে পারে তারই গল্প “পুনরাবৃত্তি”। তথ্যপ্রযুক্তির আশির্বাদপুষ্ট এই যুগে কখনো কখনো ঘটনার বিকৃতি অভিশাপের মতো ছড়িয়ে যায়! দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে অপপ্রচার,শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোকেও একে অপরের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলে। এই হুজুগে প্রতিক্রিয়ার জন্যই কিনা মিল্টনের মতো বুদ্ধিভ্রষ্ট অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, আর অসুস্থ মাকে ফেলে বাপের ভিটা ছেড়ে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটতে হয় নিরপরাধ প্রশান্তদের। উস্কে যায় সাম্প্রদায়িকতা। শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো বুনো হয়ে যায়!
এখানে কিন্তু প্রশান্ত ঘুরে দাঁড়ায়। বিকৃত মূল্যবোধ আর অজ্ঞতার বলি না হয়ে “পুনরাবৃত্তির” এই চক্র ভাঙ্গার জন্য প্রশান্ত রুখে দাড়ায়-“অনেক হইছে!পালায়া আর কয়দিন বাচুম??….
এভাবেই গড়ে উঠেছে পুনরাবৃত্তি নামক ছোট একটি সিনেমার গল্প। ছোট্ট একটি গ্রাম, একটি ছেলে আর একটি মেয়ের মধ্যকার সরল সম্পর্ক এবং উন্মুক্ত তথ্য প্রযুক্তির এই যুগেও ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া মনুষ্যত্ব…প্রজন্ম টকিজ এর ৭ম শর্ট ফিল্ম “পুনরাবৃত্তি। ধর্মীয় সংকীর্ণতা,সামাজিক প্রতিকুলতা, অজ্ঞতা ও অস্থির প্রতিক্তিয়ার দাপটে ক্ষত-বিক্ষত বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি-দেখা যায় সিনেমাটিতে। সমসাময়িক, স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। পুনরাবৃত্তি এ কারণেই যে এই ঘটনাটা আজ প্রশান্তর অতীতেও এমন প্রশান্ত ছিলো অনেকেই। “এ ব্যাপারটা অতীত থেকে বর্তমানে ঘটছে নানা স্থানে নানা ভাবে নানা ঘটনায়।
শর্ট ফিল্মটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল বাসার (প্রশান্ত), এ. কে. আজাদ ( মিল্টন), নিকিতা নন্দিনী শিমু (শান্তা), এবং নিপা খান, সাইফুল, রেজা, সাদ্দাম, জুয়েল ও আরো অন্যান্য।
চিত্রনাট্য – রফিকুল ইসলাম পল্টু, পরিচালনায় ছিলেন সালেহ সোবহান অনীম, চিত্রগ্রাহক – বরকত হোসেন পলাশ, প্রযোজক – সৈয়দ আহমেদ সাওকি ও রেহমান সোবহান সনেট।
প্রশান্ত চরিত্রটি বৈচিত্র্যময়। একই সাথে সহজ, সরল, লাজুক আবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এক যোদ্ধা; যে শুধু সামনে এগোতে জানে,পালাতে নয়! যেন চেতনার প্রতিচ্ছবি!
প্রশান্ত চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে খায়রুল বাসার বলছিলেন, পুনরাবৃত্তি আমার কাছে বিশাল এক অভিজ্ঞতা ও ভালোবাসার শর্ট ফিল্ম। চেষ্টা করেছি বর্তমান সামাজিক অস্থিরতার মূল একটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে। প্রজন্ম টকিজের সমসাময়িক সংকট এবং সামাজিক নানা অসংগতিকে উপস্থাপনের সুন্দর প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই আমি। ধর্মীয় উন্নাসিকতা, অজ্ঞতা ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙে মানবতার জয় হোক।