নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থেকে তিনি আজীবন রাজনীতি করে গেছেন পিতৃপুরুষদের মতো। কোনো অন্যায় অবিচারের সঙ্গে আপস করেননি। তার দৃঢ় অবস্থান ও ঘোষণার কারণে ২০১৫ সালের হেফাজতের তাণ্ডবের কাছে বাংলাদেশ নত করেনি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহসী নেতা ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে মারা গেছেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।
পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এসময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
এক/এগারোর সময় আব্দুল জলিল যখন গ্রেপ্তার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তী সময় ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার আর শপথ নেয়া হলো না।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সৈয়দ আশরাফ এক অনন্য উদাহরণ। তার মত নিভৃতচারী সৎ একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা এই দেশের সমকালীন রাজনীতিতে বিরল। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম-এর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন মহৎ-প্রাণ, সৎ, নীতিবান, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন আদর্শবান-ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অভিযাত্রায় ইতিহাসের ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই মহান রাজনীতিবিদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রইলো।