পিতৃপ্রধান সমাজে বাবারা ঘরের বাইরে কাজ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই কাজ করতে গিয়ে অনেকেই পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না বা দেন না।
তবে অতীতের এই প্রবণতা অনেক কমে গেছে। বর্তমানের ‘কর্মজীবী বাবা’রা পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য তুলনামূলক কম চাপযুক্ত পেশা বা কাজ বেছে নিচ্ছেন।
অথবা অন্য উপায়ে ঘরে-বাইরে সমন্বয় রক্ষা করেন বলে নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে।
দাতব্য সংস্থা ‘ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস’ তাদের গবেষণার জন্য বাবাদের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশ বাবাই পরিবার ও সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর জন্য তুলনামূলক কম বেতনের চাকরি করতেও রাজি আছেন।
আরও এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন, বাবার দায়িত্ব ও অফিসের কাজ একসঙ্গে সমন্বয় করে চলতে গিয়ে তারা পরিশ্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন।
ভারতের মুম্বাইয়ের অধিবাসী গ্যাভিন ডি’সুজা জানান, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি টানা ১০ বছর সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করেছেন। প্রতিদিনই তাড়াহুড়ো করে তাকে বাসায় ফিরতে হতো, যেন তার স্ত্রী কিম সন্ধ্যায় কাজে বেরুতে পারেন। কারণ তাদের দু’জনের আয় মিলে সংসার চলে।
কিন্তু মাস দুয়েক আগে গ্যাভিনকে সন্ধ্যায়ও কাজ করতে বলা হলে তিনি চাকরিটা ছেড়ে দেন। কেননা দিনের শুধু ওই সময়টাই তিনি পান পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য।
এরপর নতুন চাকরিতেও একই অবস্থা হওয়ায় এবার সব ছেড়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করছেন গ্যাভিন। বিদেশে কাজের বড় বড় সুযোগ পেলেও যাননি শুধু যেন মেয়েটা বেড়ে ওঠার সময়টায় তার সঙ্গে থাকতে পারেন, এজন্য।
যুক্তরাজ্যের কোভেন্ট্রির অধিবাসী কর্মজীবী বাবা-মা জেসিকা ও ড্যান শাটলওয়ার্থ। জেসিকা জানান, ছেলে জন্মানোর সময়ই দু’জনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, জেসিকা ফুল টাইম এবং ড্যান পার্ট টাইম চাকরি করবেন। ‘কারণ কর্মজীবী মা হিসেবে অফিসে একজন কর্মজীবী বাবার তুলনায় আমি অনেক বেশি অধিকার পাবো।’
জেসিকা সপ্তাহে ৩৬ ঘণ্টা এবং ড্যান ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন এবং রোববার পুরোটা দিন একসঙ্গে কাটান। তারপরও শিশু সন্তানকে একদিন করে নার্সারিতে রাখতেই হয়।
এভাবেই কোন না কোনভাবে বাবারা পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর জন্য সময় বের করে নিচ্ছেন, যা আগে এতটা দেখা যেত না।
সন্তানকে সময় দিতে অন্যান্য দিকে কাটছাঁট করার পেছনে যুক্তি হিসেবে হাঙ্গেরির অধিবাসী টামাস বলেন, ‘আপনি যদি আপনার ক্যারিয়্যারের দিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন, হয়তো আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ হারিয়ে ফেলবেন।’