ড্রয়ের আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, রাশিয়া বিশ্বকাপে কঠিন গ্রুপ হতে যাচ্ছে একাধিক। সেই ধারণাই যেন মঞ্চস্থ হল মস্কোতে! শুক্রবার ২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের ড্রয়ে কাগজে-কলমের হিসেবে মৃত্যুকূপে পা দিয়েছে বেশকটি ফেভারিট দল। জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের মত দলগুলো নিজেদের গ্রুপে পেয়েছে শক্ত প্রতিপক্ষ। যাতে একটু পা হড়কালেই মূল্য চোকাতে হতে পারে নকআউট পর্ব থেকে ছিটকে যেয়ে।
বিশ্ব গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে মৃত্যুকূপ খোঁজা হচ্ছে। যাতে সত্যিকারের গ্রুপ অব ডেথ ধরা হচ্ছে গ্রুপ ‘ডি’ এবং ‘এফ’কে। গ্রুপ ‘ডি’তে ঠাই হয়েছে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার। আর গ্রুপ ‘এফ’তে আছে জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন ও সাউথ কোরিয়া।
সামর্থ্যের পরীক্ষা দিতে হবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকেও। কারণ তাদের গ্রুপ ‘বি’তেও আছে আরেক ইউরোপিয়ান জায়ান্ট স্পেন। বাকি দুই দল মরক্কো ও ইরান র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও নিজেদের দিনে চমকে দিতে পারে প্রতিপক্ষকে!
জেনে নেয়া যাক কেন গ্রুপ ‘ডি’ ও ‘এফ’ সত্যিকার অর্থে মৃত্যুকূপ!
দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট হলেও বিশ্বকাপের মূলপর্বে আর্জেন্টিনাকে জায়গা করে নিতে হয়েছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এক লিওনেল মেসির কাঁধে চড়ে বাছাইপর্বের বৈতরণী পার হয়েছে ২০১৪ বিশ্বকাপের রানার্সআপরা। আইসল্যান্ড প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলেও শক্তির বিচারে কোন অংশে কম নয়। সামর্থ্যের প্রমাণ ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেই দেখিয়েছে ইউরোপের অন্যতম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর দেশটি। সেবার ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়েছিল তারা। বাছাইপর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চল থেকে সবার আগে রাশিয়ার টিকিট পাওয়া দলটির নাম আইসল্যান্ড।
গ্রুপ ‘ডি’র বাকি দুই দল ক্রোয়েশিয়া এবং নাইজেরিয়াকে বিপদজনক দলের তালিকায় রাখতে হচ্ছে সতর্কভাবেই। সুযোগ পেলেই চমকে দেয়া যে সম্ভব, সেটা ক্রোয়েশিয়া দেখিয়েছে ১৯৯৮ সালেই। সেবার প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলতে এসে সেমিতে জায়গা করে নেয় ক্রোয়েটরা। লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচদের মত খেলোয়াড় আছেন দলটিতে। সেই দলকে বিপদ না ভেবে উপায় কী? আর নাইজেরিয়ার গায়ে আছে আফ্রিকান জায়ান্টের তকমা। গত মাসেও আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছে দলটি। প্রতিপক্ষের দুর্বল জায়গা খুঁজে করে আঘাত হানতে পারঙ্গম আফ্রিকার দলটি।
এবার আসা যাক গ্রুপ ‘এফ’র বিশ্লেষণে। এখানে নির্ধারিতভাবেই ফেভারিট বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। চলতি বছরই দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও কনফেডারেশনস কাপ জিতে বার্তাটা দিয়ে রেখেছে জোয়াকিম লোর দল। তাই বলে স্বস্তি থাকার অবকাশ নেই চারবারের বিশ্বসেরাদের। কারণ গ্রুপে আছে সুইডেন, সাউথ কোরিয়া ও মেক্সিকোর মত বড় নাম।
১২ বছর পর বিশ্বসেরার মঞ্চে ফিরলেও শক্তির বিচারে সুইডেন ইউরোপের স্বীকৃত বড় দল। ইতালির মত চারবারের বিশ্বসেরা দল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি সুইডিশদের কারণেই। আর অভিজ্ঞতার বিচারে মেক্সিকোকে গোনার মধ্যেই রাখতে হবে জার্মান কোচ জোয়াকিম লোকে। সাউথ কোরিয়াকে নিয়ে যে মোটেও ছেলেখেলা চলবে না, সেটার প্রমাণ তো ২০০২ বিশ্বকাপই। বাঘা বাঘা দলকে পেছনে ফেলে সেবার ঘরের মাঠে শেষ চারে উঠেছিল এশিয়ান জায়ান্টরা।
সেখানে ঘোরচিন্তা কিংবা স্বস্তিতে থাকতে পারে পর্তুগাল। স্পেনের মত সাবেক বিশ্বসেরা দল আছে তাদের গ্রুপে। ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিলেও আবার নতুন করে জেগেছে স্প্যানিশরা। রিয়াল মাদ্রিদের একঝাঁক খেলোয়াড় মুখিয়ে আছে দেশের জার্সি গায়ে নিজেদের প্রমাণের। ইস্কো, মোরাতা আছেন নিজেদের সেরা ফর্মে। ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক সতীর্থের শক্তি-দুর্বলতার জায়গাটা আবার ভালই জানার কথা রোনালদোর। তাই স্বস্তি আছে কিছুটা। আবার চিন্তা কঠিন পরীক্ষাকে সামলানোরও।
তিউনিসিয়া ও ইরানও মুখিয়ে থাকবে নকআউটে জায়গা করে নিতে। এ দুই দলের কোন এক দলের কাছে হোঁচট খেলেই কিন্তু নড়ে যেতে পারে স্পেন কিংবা পর্তুগালের নকআউট স্বপ্ন!
তবে সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া ও কোস্টারিকার মত দলকে গ্রুপে পেয়েও স্বস্তিতে থাকার অবকাশ নেই ব্রাজিলের। থাকতে হবে সদা সতর্ক। ব্রজিলের গ্রুপ ‘ই’কে এক অর্থে গ্রুপ অব ডেথ বলা না গেলেও সহজ বলা চলে না মোটেও। বর্তমান সময়ে যে ফর্মে আছে নেইমারের ব্রাজিল, তাতে অঘটন কিছু না ঘটলে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বসেরাদের নকআউট খুব কঠিন হবে না, সেটা অনুমান করে নেয়া যেতেই পারে।
গ্রুপ ‘এ’তে স্বাগতিক রাশিয়ার সঙ্গে সৌদি আরব, মিসর, উরুগুয়ের লড়াই জমতে পারে বেশ। ‘সি’ গ্রুপে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্কের যুদ্ধেও নজর রাখতে হবে। ‘জি’ গ্রুপে বেলজিয়াম, পানামা, তিউনিসিয়ার মত দল পেয়েছে ইংলিশ-হাইপ ইংল্যান্ড। সেখানে ‘এইচ’ গ্রুপে পোল্যান্ড, সেনেগাল, কলম্বিয়া, জাপান; সম্ভাবনা আছে যেকোনো দলেরই। তবে এই দলগুলোকে ওভাবে পরীক্ষায় পড়তে নাও হতে পারে, যেটা মৃত্যুকূপে পড়া দলগুলোকে দিতে হবে।
তাই বাকিদের তুলনায় নিজেদের একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হবে জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালকে। কঠিনের বিচারে গ্রুপ ‘ডি’ ও ‘এফ’কে যদি সবার ওপরে রাখতে হয়, গ্রুপ ‘বি’কে রাখতে হবে তাদের গায়ে গায়েই।