দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা যখন সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন আরেকটি খবর জনমনে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল যে, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার অর্ধেক হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন সূত্রে এই অবস্থার অবতারণা হয়।
বিষয়টি দেশের সাধারণ জনমানুষের মধ্যে চিন্তার কারণ হয়েছিল। বিশেষ করে তাদের জন্য, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীসহ যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংক-ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনে নিয়মিত অর্থের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। পুঁজিবাজারের অবস্থা অনেকদিন থেকে বিনিয়োগের পরিবেশ নিরাপদ মনে করছেন না অনেকে। এছাড়া ব্যাংকে আমানত রাখলেও মুনাফা কমতে কমতে ছয় শতাংশে নেমেছে। সে বিবেচনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অনেকটা নিরাপদ মনে করে আসছিল সাধারণ মানুষ। সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পেতেন গ্রাহক।
তবে ওই প্রজ্ঞাপনের ফলে সঞ্চয়পত্রের নয়, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক বিধি অনুযায়ী পরিচালিত সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার কমানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকঘরে যে সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকের সুদের হার সরকারি ব্যাংকের সুদের হারের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সরকারের যে সঞ্চয়পত্র সেটির সুদের হার কমানো হয়নি, এটি যা ছিল তাই আছে।
ব্যাংকগুলোর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হয়তো এখন কমানো হয়নি, কিন্তু এটা ঠিক যে ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের কমানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ-সংক্রান্ত যে নির্দেশনা জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার হবে ৬ শতাংশ, যা এত দিন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল। মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য সুদ মিলবে ৫ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছরের ক্ষেত্রে তা সাড়ে ৫ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
সে হিসেবে এই বিষয়টিও গ্রামীণ জনপদে বাস করা জনগণের অর্থনৈতিক নির্ভরতায় কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যেসব জায়গায় এখনও ব্যাংকিং সুবিধা ছিল না, সেখানে ডাকঘরের মাধ্যমে অনেক ব্যক্তি বা পরিবার ওই স্কিমের গ্রাহক ছিলেন। সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তখন জনগণ তা মানতে অনেকটা বাধ্যই হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রেও হয়তো তাই হবে। কিন্তু বিষয়টি জনমন থেকে শুরু করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলে বলে আমরা মনে করি।
বিভিন্ন সূত্র ও তথ্য-উপাত্ত অনুসারে দেশের ব্যাংক, পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ নাজুক অবস্থানে আছে। সে প্রেক্ষিতে সরকার হয়তো অনেকটা বাধ্য হয়েই এধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু এধরণের পরিস্থিতিতে খেলাপী ঋণসহ বড় বড় ক্ষেত্রে অতটা কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর মতো ছোট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। আমাদের আশাবাদ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আঘাত করে, এমন বিষয়গুলোতে আরো মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্টরা।