চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সকাল সকাল ‘পানি থেরাপি’র যত উপকারিতা

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানি পান – এটা অনেকের জন্যই দিন শুরু করার নিত্যদিনের অভ্যাস। অভ্যাসটা আপনিও আয়ত্ব করতে পারেন। শরীরের জন্য প্রতিদিনকার দরকারি ২.৭ থেকে ৩.৭ লিটার পানির যোগান দেয়া সবসময় হয়ে ওঠে না।

তাই এই ‘মর্নিং ওয়াটার থেরাপি’র সাহায্য নিয়ে সেই দরকারি কাজটির ঠিকঠাক শুরু নিশ্চিত করতে পারেন আপনি।

আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে জাপানি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাশাস্ত্রসহ এশিয়ান চিকিৎসাশাস্ত্রের বহু শাখায় পানি থেরাপি প্রচলিত।

উপকারিতা:

  • শুধু পানির চাহিদা পূরণ নয়, বড় এক গ্লাস কুসুম গরম পানি দিয়ে দিন শুরু করলে দেহের পরিপাকক্রিয়া ঠিকঠাক শুরু হয়, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ভালো চিকিৎসাও এটি।
  • এই অভ্যাসের ফলে রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়, খাবার হজমে সাহায্য করে পানি থেরাপি। রক্তনালী প্রসারণের কারণে অনেকের হৃদরোগের ছোটখাটো সমস্যাও কমে যায়।

    আয়ুর্বেদ তামার পাত্রে সারারাত গরম পানি রেখে পানের পরামর্শ দেয়
  • শরীরে জমা হওয়া টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ দ্রুত বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে পানি। ঈষদুষ্ণ পানির এই ক্ষমতা আরও বেশি। এতে ব্রণের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। পাশাপাশি কিডনিও সুস্থ থাকে।
  • পরিপাকতন্ত্রের টক্সিন পরিষ্কার করে এর কার্যকলাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করায় স্থূলতা নিয়ে যারা ভুগছেন তাদেরও কাজে আসে পানি থেরাপি।
  • এখনো এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা না হলেও থেরাপি গ্রহণকারীসহ আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে,  ডায়াবেটিস, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, পাইলস এমনকি মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যায়ও কষ্ট লাঘবে সহায়ক সকাল সকাল কুসুম গরম পানি পান। ঠাণ্ডা পানিতে এই উপকার পাওয়া যায় না।

কীভাবে ‘মর্নিং ওয়াটার থেরাপি’কে প্রতিদিনের রুটিনের অংশ করবেন:

১. ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার আগেই পানি পান করুন। জাপানি পানি থেরাপিতে ১৬০ মিলি প্রতিগ্লাস হিসেবে অন্তত ৪ গ্লাস কুমকুম গরম বা কক্ষ তাপমাত্রার পানি পান করতে বলা হয়েছে। কোনো কোনো আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ আবার বলেন ১.২ লিটার পানির কথা। এতটা লাগবে না, অন্তত এক বা দু’গ্লাস পানি পান করুন।

২. এখন ব্রাশ করুন। তবে পানি পানের পর ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আর কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকুন।

কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করা আরও উপকারি

আয়ুর্বেদ কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মেশানোর পরামর্শ দেয়। এতে অন্ত্রের দেয়ালের পেশিগুলোতে সংকোচন-প্রসারণ হয় এবং মলত্যাগের মাধ্যমে দেহ থেকে দ্রুত বর্জ্য বেরিয়ে যায়। একই সঙ্গে পুরো পরিপাকতন্ত্রেই উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।

লেবুতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পরিপাকনালী থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে উপকারি। আয়ুর্বেদ মতে, লেবু মেশানোর আগে ফুটন্ত পানি সারারাত তামার পাত্রে রেখে দিলে পানিতে থাকা জীবাণুও ধ্বংস হয়ে যায়।

সাবধানতা:
পানি থেরাপি সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ দেয়া চিকিৎসা নয়। হজম বা ব্রণের সমস্যাসহ স্বাভাবিকভাবেও পানি থেরাপি গ্রহণ করতে ক্ষতি নেই। তবে ব্যক্তিভেদে এর উপকারিতা-অপকারিতা থাকতে পারে। আপনার যদি ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তবে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন। গর্ভবতী, বয়স্ক বা কিডনির সমস্যা আছে এমন কারও এই থেরাপি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না নেয়াই ভালো।

এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত পানি পান থেকে বিরত থাকুন। এতে সুস্থ হওয়ার চেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এটি মাথাব্যথা, বমিভাব থেকে বমি, ক্লান্তি, বারবার মূত্রত্যাগসহ কোনোভাবে পানি মস্তিষ্কের কোষে ঢুকে গেলে তা খিঁচুনি, শ্বাস বন্ধ, কোমা এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। সুতরাং মনে রাখবেন, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।