চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সংসদে উত্থাপিত বিল ও জাস্টিসিয়ার সাথে কথাবার্তা

করোনা মহামারীর কারণে দেশে স্বশরীরি আদালতের কার্যক্রম বন্ধ। তাই উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য জাস্টিসিয়ার সাথে দেখা হয়না অনেকদিন। তবে জাস্টিসিয়ার সাথে মাঝে-মাঝে মনঃসংযোগে কথা হয়। জাস্টিসিয়া রাষ্ট্র-সরকার-আদালত আর দেশের জনগণ নিয়ে প্রায়-প্রায়ই কি যেন বলতে চায়। তবে বলতে চাওয়া কথা না বলে গতকাল জাস্টিসিয়া আমাকে একটা অশরীরী খোঁচা দিয়ে বলে, অধিকার আর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে শেষমেশ তো তোমরা জনগণ এই আদালতেই আসো। কিন্তু আদালত যে আইন নিয়ে চলে সেই আইনের জন্ম মৃত্যু কিংবা পুনঃজন্ম নিয়ে কোন খোজ খবর রাখো কি? এমন ইংগিতবাহী প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে জাস্টিসিয়াকে বলি, যে দেশে ‘স্বার্থরক্ষার’ জন্য শত-শত আইন হয় কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ আইনের সঠিক প্রয়োগ হয়না সে দেশে আইনের জন্ম-মৃত্যু নিয়ে এতো ভেবে কোন লাভ আছে? আমার মত জনগণের কাছ থেকে এমন নিস্তেজ উপলব্ধি শুনে জাস্টিসিয়াও কেমন যেন থমকে যায়। তবু নাছোড়বান্দা জাস্টিসিয়া ফিসফিস করে আমাকে বলে, জানো নাকি? বছরে “একাধিকবার” বিদুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২০’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এই বিল পাস হয়ে আইনে কার্যকর হলে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বছরে এক বা “একাধিকবার” বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডিজেল, পেট্রলসহ জ্বালানির মূল্য পরিবর্তন করতে পারবে। কিন্তু ২০০৩ সালে পাস হওয়া বিদ্যমান আইনে যেখানে বলা ছিল ‘এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে “একবারের” বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানিমূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটে। সেখানে প্রস্তাবিত এই বিলে বলা হয়েছে, ‘কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে কমিশনের একক বা পৃথক আদেশ দ্বারা, প্রয়োজন অনুসারে এক বা “একাধিকবার” পরিবর্তন করতে পারবে।’

হ্যাঁ, জাস্টিসিয়ার কাছ থেকে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য বছরে “একাধিকবার” পরিবর্তন সংক্রান্ত বিলের এই গল্প শুনে আমার আবার হঠাৎ ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির কথা মনে পড়ে গেল। আমি এবার জাস্টিসিয়াকে উল্টো জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জ করা রিটের খবর জানো? জাস্টিসিয়া বলল না তো! ইদানিং ভার্চুয়াল আদালত চলায় এই অঙ্গনে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীর আনাগোনা নেই। তাই এবিষিয়ে কিছুই জানা হয়নি। তখন জাস্টিসিয়াকে বললাম শুনো তাহলে, গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ভার্চুয়াল হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রিটের যুক্তিতে এই আইনজীবী বলেছেন, ‘ঢাকা ওয়াসা গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৫ শতাংশ হারে পানির মূল্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু আবার এবছর প্রায় ২৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি দেয়, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর। অর্থাৎ এক অর্থবছরেই দুইবার মূল্য বাড়ানো হল। অথচ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন আইনের ২২ (২) ধারা অনুসারে মূল্য (অভিকর বা চার্জ) প্রতি অর্থবছরে মাত্র একবার অনধিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো কথা।’

আইনজীবীর এই যুক্তি শুনে জাস্টিসিয়া কৌতূহলের সাথে আমার কাছে এবিষয়ে আদালতের আদেশ জানতে চাইল। আমি জাস্টিসিয়াকে বললাম যে, ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির ওপর আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের দেয়া ওই নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে ঢাকা ওয়াসা। এখন দেখা যাক চেম্বার আদালত থেকে কি আদেশ আসে। আমার কাছ থেকে এসব শুনে জাস্টিসিয়া কেন যেন ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে চুপ হয়ে গেল। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে জাস্টিসিয়ার সাথে আজকের কথাবার্তা শেষ করলাম।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)