সংসদীয় ব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দ্বিতীয় দফায় শপথ নিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে কতোটা প্রভাব বিস্তারকারী ছিলেন তিনি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাজনীতিবিদরা বলছেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি আলংকারিক পদ হলেও নিজের ইমেজেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজেকে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রাখতে পেরেছেন। খোলামেলা বক্তব্য দিয়ে তিনি যেমন চিন্তার নতুন জানালা খুলে দিয়েছেন, তেমনি আলোচনায়ও ভিন্ন মাত্রা এনেছেন।
তারা বলেন, অবস্থানগত কারণেই রাষ্ট্রপতি হয়তো নীতিগত জায়গায় দৃশ্যমান ছিলেন না, কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থায় একজন রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি হলে সামগ্রিকভাবে যে প্রভাব রাখতে পারেন সেটা আবদুল হামিদ রেখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স. ম. আলী রেজা বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কখনো প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজ করতে পারেন না। সে হিসেবে বলা যায় তার কাজ অনেকটা রুটিন ওয়ার্ক। সেটা তিনি খুব ভালোভাবে করেছেন।
‘আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতির জন্য সুবিধা ছিল যে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়ে খুব বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি। সেদিক থেকে তাকে ভাগ্যবানও বলা চলে। ক্রিটিক্যাল কোনো পরিস্থিতি এলে তিনি কীভাবে সেটা সামাল দিতেন সেটা দেখার বিষয় ছিল।’
তবে নির্বাচনের বছরে নির্বাচনের উত্তাপের সময়ে তিনি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন বলে মনে করেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি বলেন, এ বছর নির্বাচনের বছর তাই আমরা সবাই একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। উনি রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তাই সেই বিষয়গুলোও নিশ্চয়ই তিনি ঠিকমতো সামলে নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি অলঙ্কারিক পদ। সেখানে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তার খুবই সীমিত। সরকার প্রধানের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হয় রাষ্ট্রপ্রধানকে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তবে সেই সঙ্গে এটাও বলা হয়ে থাকে যেন তার কাছ থেকে এক্সট্রাঅর্ডিনারি কোনো পাওয়ার আশা না করি। সেই জায়গা থেকে বলতে গেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভালো কাজ করেছেন।
‘সংসদীয় ব্যবস্থায় থেকেই অনেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো বা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর দাবি জানিয়ে থাকেন। সেটা সংসদীয় ব্যবস্থার সঙ্গে যায় না। সেক্ষেত্রে থিওরি বদল করা যায়। চাইলে সংসদীয় ব্যবস্থা ছেড়ে অন্য ব্যবস্থায় যাওয়া যায়, কিন্তু থিওরির সিস্টেম বদলানোটা সংসদীয় ব্যবস্থার পক্ষে যায় না।’
সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অবস্থা জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ঠিক যতটা দায়িত্ব পালন করার কথা ততটাই পালন করেছেন আবদুল হামিদ। সংসদ কার্যকর রাখার ক্ষেত্রে যতটা কাজ করার কথা ততটা তিনি করেছেন এবং আগামীতেও তিনি করবেন।
‘সরকারের দায়িত্ব পালনেও তিনি তার পরামর্শ দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে দেবেন,’ বলে মনে করেন এই রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সেই সঙ্গে তিনি
বিভিন্ন দায়িত্ব ও পদ পালন করেছেন যথাযথভাবে। ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, আর বিরোধীদলের হয়েও সংসদে সবসময় সক্রিয় ছিলেন তিনি। সক্রিয় ছিলেন সংসদের বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রমে। সবসময় পরামর্শ দিয়েছেন নতুন সংসদ সদস্যদের ভালো সাংসদ হয়ে উঠার জন্য।
‘রাষ্ট্রপতি হিসেবেও বেশ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব ও পরামর্শ প্রদান করে গেছেন সবসময়। সেজন্য তার প্রভাব বেশ বিস্তৃত।’
আগামী ১৫ই এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন মো. আবদুল হামিদ। দেশের একুশতম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবদুল হামিদকে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে স্পিকার ড. শিরীর শারমিন চৌধুরী শপথ পড়াবেন।