ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনকে হত্যার চেষ্টা হচ্ছে বলে তথ্য জানানো কথিত একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পর নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও আর সংবাদ সম্মেলনে আসেননি ড. কামাল হোসেন। তবে কি তিনি এ বিষয়ে শঙ্কিত?
বুধবার ফাঁস হওয়া ফোনালাপে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে শওকত নামে সিলেটের স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের ওপর হত্যার হুমকি আছে বলে জানাতে শোনা গেছে।
শওকত নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘একটা ইম্পরট্যান্ট খবর দেয়ার জন্য আপনাকে ফোন দিলাম। আপনি ড. কামাল হোসেনকে যে কোনোভাবে কোনো নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যান। কারণ, ওনার ওপর অ্যাটেম্পট আছে। যদি টাকা পয়সায় কাজ না হয় বিএনপির, ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা…, আমি এটা লন্ডন থেকে খবর পেয়েছি, তারেক রহমানের খুব ক্লোজ, কারণ আপনি জানেন যে, বিএনপির সব নেতাকর্মী হচ্ছে সিলেটের।’
এই অডিওটি এমন সময় ফাঁস হয় যখন গতকাল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পুলিশ নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর বুধবার দুপুরে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেন এর চেম্বারে যান পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ঐক্যফ্রন্টের গণমাধ্যম সমন্বয়ক লতিফুল বারি হামিম বলেন, মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তারা বেলা ১২টা ১০ মিনিটের দিকে ড. কামালের চেম্বারে আসেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন।
ড. কামালের চেম্বার থেকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কর্মকর্তারা।
উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, কামাল হোসেনের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব শুনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া টেলিফোনে ড. কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানা যায়।
এদিকে হত্যাচেষ্টার অডিও ফাঁস এবং সকালে চেম্বারে পুলিশের উপস্থিতি মিলিয়ে বিকালে ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হনননি কামাল হোসেন।
এ বিষয়ে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এর আসার কথা ছিলো না।
অডিও ফাঁস ও চেম্বারে পুলিশ যাওয়া প্রভৃতি নিয়ে কি শঙ্কিত জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ড. কামাল হোসেন বলেন, এসব নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমার নিরাপত্তা বিষয়ে খোঁজ নিতে এসেছিল পুলিশ। ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, আমার নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আমি তাদেরকে বলেছি, আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, পুলিশ সম্পর্কে আমার বক্তব্য নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। অতীতে যদি দেখেন, আমি সবসময়ই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করেছি। ৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগে কিভাবে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি পুলিশকে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করতে বলেছি। বলেছি দেশের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা।
এসময় তিনি নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের উপর হামলা ও ধরপাকড় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভোটের আর মাত্র ৩দিন বাকি। এই সময় প্রার্থীদের হামলা ও ধরপাকড়ে মেনে নেওয়া যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আমরা সবকিছু সহ্য করেও নির্বাচনে আছি। নির্বাচনে যে আমরা আছি তা জনগণ দেখুক, সারা বিশ্ব দেখুক। আমরা দেখাতে চাই যে, কোনো ধরনের নিরাপত্তা, সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সিইসি দিতে পারেননি। আমরা দেখছি, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থা সারাবিশ্বকে আমরা দেখাতে চাই।