শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে জরুরী অবস্থার মাঝেও হাজারো মানুষ যোগ দিয়েছেন।
তবে ১৬ জনের মরদেহ সৎকারের পরই আজকের মতো শেষকৃত্য অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স চার্চ। সৎকার অনুষ্ঠান পেছানোর কোনো কারণও জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
একদিকে প্রিয়জনের চিরবিদায়কে ঘিরে শোকে কাতর পুরো শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের মাঝে দেশটি বিদায় জানাচ্ছে তার সন্তানদের। আর অন্যদিকে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সরকার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩২১। আহত ৫শ’র বেশি।
এখনো রক্তের দাগ না শুকানো সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স গির্জায় প্রবেশ করছে একের পর এক কফিন। শেষকৃত্যের মঞ্চে শুয়ে সারি সারি স্বপ্ন। সঙ্গে স্বজনদের শেষ শ্রদ্ধা আর আহাজারি। মঙ্গলবার পুরো শ্রীলঙ্কার চিত্রটা এমনই।
নিজ বাসায় শেষবারের মতো নিহতরা। বাড়ির সবচেয়ে আদরের মানুষটির এমন করুণ পরিণতি কে মেনে নিতে পারেন?
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে প্রিয়জনদের শেষ বিদায় জানানো হচ্ছে। সমাধিক্ষেত্রগুলো জুড়ে প্রস্তুত শতশত কবর। কারো কারো আবার ঠাঁই মিলেছে গণকবরে। গৃহযুদ্ধের পর গত এক দশকে একসাথে এত মরদেহের ভার বইতে হয়নি দেশটিকে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকার ১ লাখ রুপি করে দিয়েছে দেশটির সরকার। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিত সেনারত্নে।
প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা আর চোখের পানিতে ভিজছে পুরো দেশ। এমন দিন আর কখনোই না আসুক, শ্রীলঙ্কাবাসীর এই একটাই চাওয়া।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
শ্রীলঙ্কায় গির্জা এবং পাঁচতারকা হোটেলসহ আটটি স্থানে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। নৃশংস হামলায় হতাহতদের জন্য দেশটিতে আজ পালিত হচ্ছে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক।
এদিকে পূর্ব সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সরকারের ওপর হামলার দায় চাপিয়েছে খোদ সরকার দলের সদস্য ও বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমেসিংহে নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন, যদি ১০ দিন আগেই পুলিশের কাছে সতর্কবার্তা এসে থাকে, তবে সেটিকে গুরুত্ব দেয়া হলো না কেন?
হামলার তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাতিসংঘ। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াও জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বোমা হামলার ঘটনার তদন্তে ফেডারেল পুলিশের একটি বিশেষ দল পাঠাবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, বোমা হামলার ব্যাপারে যে কোনো ধরনের তদন্তে সাহায্য করবে অস্ট্রেলিয়ার এই বিশেষ দলটি।
হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ।
যা ঘটেছিল
রোববার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে সেইন্ট অ্যানথনি’স সমাধিক্ষেত্র ও উপাসনালয়, তিনটি পাঁচতারকা হোটেল শ্যাংরি লা, দ্য কিংসবারি ও সিনামন গ্র্যান্ড, দেহিওয়ালা চিড়িয়াখানার পার্শ্ববর্তী হোটেল এবং দেমাটাগোডার একটি আবাসিক অঞ্চলে বোমা হামলা চালানো হয়।
অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স চার্চ এবং বাটিকালোয়া শহরের আরেকটি উপাসনালয়ে ইস্টার সানডে উপলক্ষে আয়োজিত প্রার্থনা অনুষ্ঠানে কাছাকাছি সময়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম হামলাটি চালানো হয় সেইন্ট অ্যানথনি’স সমাধিক্ষেত্রে। এরপর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’সে। তারপর একের পর এক বাকি স্থানগুলোতে।
কলম্বো টেলিগ্রাফ জানায়, সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
দেশটির গণমাধ্যম বলছে, রাজধানী কলম্বোসহ আটটি স্থানে চালানো হামলার বেশিরভাগই ছিল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ। ওই হামলাকারীদের আটক করতে গিয়ে প্রাণ গেছে তিন পুলিশ কর্মকর্তার।
এরই মাঝে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিমানবন্দরে শক্তিশালী বোমা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। পরে বিমান বাহিনী বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে সফল হয়।
এছাড়া সেইন্ট অ্যানথনি’স শ্রাইনের কাছাকাছি আরেকটি গির্জার কাছে সোমবার অবিস্ফোরিত একটি গাড়িবোমা পাওয়া যায়। বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শেষে সেটির নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।