শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শুক্রবার ‘প্রতিবাদ সমাবেশ’র আয়োজন করেছে ছাত্র-শিক্ষক-লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিকবৃন্দ।
বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ মে স্কুলে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে তাকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান শারীরিক নির্যাতন ও কান ধরে ওঠ-বস করিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ঐ বিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরীচ্যুতও করা হয়। এমনকি স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি দর্শকসারিতে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অবলোকন করেছেন এবং সাংসদের নীতি বহির্ভুত কর্মকাণ্ডের সমর্থন করেছেন।”
“পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্তে দেখা গেছে শিক্ষক শ্যামল কান্তি কোনো প্রকার ধর্মীয় অবমাননা করেননি। বর্তমানে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচারিক কর্মকাণ্ড চলছে এবং এ ঘটনায় সম্প্রতি সাংসদ সেলিম ওসমান জামিন নিয়েছেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “শিক্ষক লাঞ্ছনার মামলার কারণেই শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে তার বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগম ২০১৪ সালে তার কাছ থেকে এমপিও ভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নিয়েছেন, এমনটি দাবি করে মামলা দায়ের করেন। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়।”
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। আর ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় গত বছরের মে মাসে। এর দুই মাস পর মামলাটি করেন ওই শিক্ষিকা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইংরেজির শিক্ষিকা মোর্শেদা বেগমের চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রথমে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে আরও এক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষিকা মোর্শেদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করার কোনও উদ্যোগ নেননি।
এই ঘটনায় গত বছরের ২৭ জুলাই মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালত বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। গত ১৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত বুধবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত বছর ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লফিত উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এমপি সেলিম ওসমান ও অপু প্রধানকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে মঙ্গলবার (২৩ মে) ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর মঙ্গলবার আদালত সেলিম ওসমানের জামিন মঞ্জুর করেন।