১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাজধানীর মিরপুরের ছগির মাস্টার জাল মুদ্রা তৈরি ও সরবরাহের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় জাল মুদ্রার বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসসহ জাল মুদ্রা তৈরির অন্যতম হোতা লিয়াকত আলীকে গ্রেপ্তারের পর এমনটি জানতে পেরেছে র্যাব-৩।
লিয়াকতের দেওয়া তথ্যে খিলগাঁও থেকে তার অন্যতম সহযোগী জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবকে লিয়াকত জানায়, জাল মুদ্রা তৈরির ক্ষেত্রে তার ‘দীক্ষা গুর ‘ ছগির মাস্টার।
র্যাব জানায়, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর জাল মুদ্রা তৈরির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন রাজধানীর মিরপুরের ছগির মাস্টার। তার সহযোগী হিসেবে লিয়াকত এই চক্রের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। গত দশ বছর ধরে কেরানীগঞ্জে নিজের ভাড়া বাসাতেই জাল মুদ্রা তৈরি শুরু করে তারা। পরে সে নিজেই গড়ে তুলে অন্য একটি সিন্ডিকেট।
শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন: শেয়ারবাজারে আমাদের দেশে ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবিসহ নানা পেশার মানুষ বিনিয়োগ করে। সাধারণ মানুষ কখনোই জানতো না যে, শেয়ার বাজারে ধস নামবে।
‘‘শেয়ারবাজারে আকস্মিক পতনে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়, অনেকে আবার জীবনের শেষ সম্বল বা বিপুল পরিমাণ ঋন নিয়েও শেয়ারে বিনিয়োগ করে। ফলে এমন ধসে তাদের কিছু করার থাকে না। যারা ধসের বিনিয়োগ কাটিয়ে উঠতে পারে না তারা খুব দ্রুত কিছু করে ঋনের বোঝা দূর করতে চায়। দ্রুত মুনাফা একমাত্র ‘ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ এ পাওয়া যায়, যা অবৈধ উপায়েই একমাত্র করা যায়।’’
অধিক মুনাফার জন্য মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়ায় জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন: নানা পেশার নানা রকমের মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। যারা নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কখনোই তা কাটিয়ে উঠতে পারে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ বড় ধরণের অর্থনৈতিক বিপদে পড়ে অপরাধের সঙ্গে জড়ায়।
‘তাই শেয়ারবাজারে ধসের বিষয়গুলো তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় এনে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে অধিক মুনাফার জন্য এভাবে নানা রকমের অপরাধীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে’, বলেন অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব।
লিয়াকতের গুরু ছগিরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন: ছগিরের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তথ্য নেই। লিয়াকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তার দেয়া তথ্যমতে আমরা ছগিরের সন্ধান শুরু করেছি। ছগিরকে গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি করেছে।