আবাহনীকে হারাতে পারলে এক ম্যাচ আগেই শিরোপায় চুমু খেত রূপগঞ্জ। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার লিগের দ্বৈরথে নেমে পেরে উঠল না তারা। আবাহনী ওপেনার সৌম্য সরকারের ঝড়ো সেঞ্চুরির কাছে ম্লান হয় রূপগঞ্জের ওপেনার নাঈম শেখের অপরাজিত ১২৩ রানের ইনিংসটি।
রূপগঞ্জকে ১০২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপায় নাম লেখানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছে আবাহনী। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ২৪ করে। আগামী মঙ্গলবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডেই হতে যাচ্ছে শিরোপা নির্ধারণ।
এদিন মিরপুরে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে খেলবে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে লড়বে আবাহনী। শেষ রাউন্ডের অন্য ম্যাচে ফতুল্লায় মুখোমুখি হবে মোহামেডান-প্রাইম দোলেশ্বর।
রোববার বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সৌম্যর ৭৯ বলে ১০৬, জহুরুল ইসলামের ৮৩ বলে ৭৫ ও মোহাম্মদ মিঠুনের ৩৪ বলে অপরাজিত ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৭৭ রানের পাহাড় গড়ে আবাহনী।
জবাবে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের পরও নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি রূপগঞ্জ।
ম্যাচে মূল পার্থক্য গড়েন সৌম্য। রানে ফেরার দিনটি রাঙান সেঞ্চুরিতে। জহুরুলের সঙ্গে গড়েন ১৬৯ রানের ওপেনিং জুটি। বাজে সময় পার করেন দুর্দান্ত ইনিংস খেলে।
০, ১৭, ২, ১, ১৪, ১০, ১২, ২৯, ৪৩, ৩৬-এই ছিল সৌম্যর শেষ ১০ ইনিংসের রান। ফর্ম নিয়ে চাপে থাকা এ বাঁহাতি আবাহনীকে জয় এনে দেয়ার পাশাপাশি ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপ মিশনের আগে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির সুবাতাস আনলেন।
হারলেই শিরোপা রূপগঞ্জের কাছে হাতছাড়া, এমন সমীকরণের ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমেই জ্বলে ওঠেন সৌম্য। ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৯ বলে। তিন অঙ্ক ছুঁতে সময় নেন আর ৩২ বল। ৭১ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক স্পর্শ করার পথে মারেন ১৪ চার ও ২ ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে ১৫টি চার ও দুই ছক্কায় ১০৬ রান করে নাবিল সামাদের বলে মুমিনুল হকের হাতে ধরা পড়েন।
সৌম্যর বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ভর করে বড় স্কোর গড়ে আবাহনী। সৌম্য ঝড়ের সঙ্গে পরে তাল মেলান অন্যরাও। মিঠুনের অপরাজিত ৬৪, ওয়াসিম জাফরের ৪৬ ও সাব্বির রহমানের ৩৩ রানের সুবাদে চারশর কাছাকাছি সংগ্রহ দাঁড় করায় আকাশী-নীল শিবির।
রূপগঞ্জ পেসার তাসকিন আহমেদে ও মোহাম্মদ শহীদ নেন দুটি করে উইকেট। শুভাশীষ রায়, নাবিল সামাদ ও রিশি ধাওয়ান নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে ঝড় তোলার চেষ্টা চালান রূপগঞ্জের ইনফর্ম ওপেনার মেহেদী মারুফ ও নাঈম শেখ। তবে একশর আগেই চার উইকেট হারালে ব্যাকফুটে চলে যায় গত আসরের রানার্সআপ দলটি।
পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেলে ধীরগতিতে এগিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাঈম। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ বল খেলে অপরাজিত থাকেন ১২৩ রানে। এ তরুণের ইনিংসে ছিল ১৩টি চার ও দুটি ছয়ের মার।
শেষদিকে শহিদের ৪৭ বলে ৫৩ ও তাসকিনের ২৩ বলে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে হারের ব্যবধান কমায় রূপগঞ্জ।
মেহেদী হাসান মিরাজ তিনটি, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
প্রিমিয়ারে টিকে থাকল ব্রাদার্স
ফজলে মাহমুদের সেঞ্চুরিতে বিকেএসপিকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। উত্তরা স্পোটিং ক্লাবের সঙ্গে পয়েন্ট সমান (৮) হওয়ায় বিবেচনায় আসে রানরেট। ব্রাদার্স এগিয়ে থাকায় শেষরক্ষা হয় ঐতিহ্যবাহী দলটির।
আগেই অবনমন নিশ্চিত হয়ে যায় বিকেএসপির। তাদের সঙ্গে যোগ হল উত্তরা। দুটি দলই এ আসরে প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসে প্রিমিয়ারে। এক মৌসুম খেলেই তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে প্রথম বিভাগে।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে আমিনুল ইসলামের অপরাজিত ৯০ রানের ইনিংসে ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান তোলে বিকেএসপি। জবাবে ফজলে মাহমুদের অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে ব্রাদার্স।