গেল ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় শাকিব খান অভিনীত ‘নোলক’ ছবির শুটিং। টানা ৩২ দিন শুটিং চলে ভারতের রামুজি ফিল্ম সিটিতে। তখন ছবির ৮৫ ভাগের বেশি শুটিং শেষ হয়। প্রায় সাতমাস বিরতি দিয়ে শেষ পর্যায়ে ‘নোলক’ ছবির পরিচালনা থেকে বাদ পড়লেন পরিচালক রাশেদ রাহা। তাকে বাদ দিয়েই ছবির শুটিং শেষ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানালেন তরুণ এই নির্মাতা।
বর্তমানে ‘নোলক’ ছবির শুটিং চলছে কলকাতায়। রাশেদ রাহাকে বাদ দিয়ে শেষ পর্যায়ে শুটিং করছেন ‘অগ্নি ২’, ‘বিজলী’ ছবির পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। শেষ লটে এসে ‘কেন পরিচালনা থেকে বাদ গেলেন?’ এবং অন্য পরিচালক দিয়ে কেন শুটিং করা হচ্ছে? এ নিয়ে একটি অভিযোগ পত্র জমা পড়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে।
আজ (রোববার) বিকেলে লিখিতভাবে অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন রাশেদ রাহা। পরিচালক সমিতিতে জমা দেয়ার পর চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এসেছে রাশেদ রাহার লিখিত অভিযোগটি। সেখানে রাশেদ রাহা বলেছেন, ‘নোলক’ ছবির বাকি অংশের শুটিং করার জন্য আমি অনেকদিন থেকেই প্রস্তুত।
কিন্তু মাস খানেক আগে এই ছবির পরিচালক সাকিব ইনতেজার চৌধুরী (সনেট) এর পক্ষ থেকে বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য পরিচালক ইফতেখার চোধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়। ছবির নির্মাণ কৌশল ও গোপনীতাবজায় রাখার স্বার্থে কারো সঙ্গে পরামর্শ করতে আগ্রহী ছিলাম না।
রাশেদ রাহা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, আমাকে ছাড়াই পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী দিয়ে ‘নোলক’-এর বাকি অংশের কাজ করার জন্য প্রযোজক ইতোমধ্যেই (২১ জুলাই) কলকাতায় পৌঁছেছেন। পুরো ব্যাপারটাই আমার অজ্ঞাত।
একটি সিনেমা একজন নির্মাতার কাছে তার সন্তানতুল্য উল্লেখ্য করে রাশেদ রাহা বলেন, নোলক আমার প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবি নিয়ে মিশে আছে আমার স্বপ্ন। পরিচালকের কাছে তার প্রথম ছবি সন্তানতুল্য। সৃষ্টি হারানোর আশঙ্কায় আমি মাসনিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি নিয়মিত ছবি পরিচালনা করতে চাই। তাই সম্মানিত স্পরিচালক সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
নির্মাতা রাশেদ রাহার অভিযোগের ভিত্তিতে চ্যানেল আই অনলাইন যোগাযোগ করে পরিচালক সমিতির মহা সচিব বদিউল আলম খোকনের সাথে। রাশেদ রাহার অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচালক সমিতির এই নেতা বলেন, আমরা রাশেদ রাহার অভিযোগটি পেয়েছি। তিনি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নির্মাতার অভিযোগ সত্য হলে পরিচালক সমিতি কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘‘সত্যতা প্রমাণ হলে ব্যবস্থা কি নেয়া হবে এটা এখনই বলতে পারছি না। কারণ এক্সিকিউটিভ বডি আছে, সবাই একসাথে বসে এটা ঠিক করতে হবে। কিন্তু আমরা প্রথমে বর্তমান ‘নোলক’-এর যে ডিরেক্টর আছেন তার সাথে আগে যোগাযোগ করবো। তাকে আমরা বলবো, এই ছবির এতো শতাংশ কাজ অন্য আরেকজন(রাশেদ রাহা) করেছেন।
তিনি আমাদের পরিচালক সমিতির সদস্য। এখন প্রডিউসার যদি বাকি শুটিং সম্পন্ন করতে আপনাকে অন্তর্ভূক্ত করেন সে ক্ষেত্রে আগের পরিচালকের অনুমতি বা পারমিশন লেটার চেয়েছেন কিনা! অর্থ্যাৎ আগের ডিরেক্টর অনুমতি দিলে আপনি ‘নোলক’-এর বাকি শুটিং শেষ করবেন, না হলে করবেন না। আর যদি অনুমতির অপেক্ষা না করেন তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিবো। এটা আমাদের গঠনতন্ত্রেই রয়েছে।’’
‘নোলক’ ছবির নায়ক শাকিব খান বর্তমানে আছেন সখিপুর আনসার ক্যাস্পে। সেখানে তিনি ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির শুটিং করছেন। শাকিব জানান, এতকিছু ঘটে গেল আমি কিছুই জানি না। শুটিং শেষ দিকে এসে কীভাবে পরিচালক বদলে যায় আমি নিজেও বুঝলাম না। এটা মোটেও ঠিক হলো না।
প্রযোজক সনেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিব খান বাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিং চলছে কলকাতায়। সেখানে যোগ দিয়েছেন ওমর সানী, মোসুমী, ববি প্রমুখ। এর আগে গেল ২৪ জুন চ্যানেল আই অনলাইনে ‘শাকিবের ‘নোলক’ কি ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে?’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়েছিল।
সেখানে রাশেদ রাহা তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘নোলক’-এর পুরো শুটিং হয়েছে হায়দ্রাবাদে। কিন্তু যে দুটি গানের শুটিং বাকি আছে, একটি শুটিং লোকেশন হবে ভিন্ন, রাজস্থানে। অন্যটি ইনডোরে। তাই সেবার শুটিং শেষ করা হয়নি।
রাশেদ রাহা বলেন, ‘শাকিব ভাইয়ের দুটি গান ও মাত্র একটি সিকোয়েন্স বাকি আছে। দুটো গান দুই দিন করে চারদিন, একটি সিকোয়েন্স আর একদিন। এই পাঁচদিন কাজ করতে পারলেই শেষ। অন্য শিল্পীদের বাকি ছোট ছোট কাজ যেকোনো সময় শেষ করা যাবে।’
ফেরারী ফরহাদের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপে ছবিটি পরিচালনা করছেন রাশেদ রাহা। ছবিতে শাকিবের নায়িকা ববি। আরও অভিনয় করেছেন ওমর সানি, মৌসুমি, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, রেবেকা, শহিদুল আলম সাচ্চু রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত। ছবিটি আগামী ঈদুল আযহায় মুক্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাবে কিনা সেটা এখন রয়েছে সংশয়।
গেল ২১ নভেম্বর রাতে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে জমকালো আয়োজনে নোলকের মহরত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ডিসেম্বরে শুটিং শুরু হয়। মহরত অনুষ্ঠানে শাকিব বলেছিলেন, ‘আধুনিক ও মানসম্মত বাংলা সিনেমা হবে ‘নোলক’। চ্যানেল আইকে রাশেদ রাহা বললেন, পুরো কাজটা পরিকল্পনা মতো করার চেষ্টা করেছি। কমার্শিয়াল ধারায় বাংলাদেশী দর্শকদের জন্য নতুনত্ব আসবে ‘নোলক’র মাধ্যমে।