প্রথমবারের বৃষ্টি বাধায় সাউথ আফ্রিকার ইনিংস ঘোষণা পেছাল। পরেরবারের বৃষ্টি বাধায় পেছাল বাংলাদেশের টেস্ট-পরীক্ষা। ৪২৪ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে ম্যাচ বাঁচাতে নেমে শূন্য রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বসা টাইগাররা তৃতীয় উইকেট খোয়ানোর পর চা রিরতির সময়ই আবারও বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থদিনের খেলারই সমাপ্তি।
চা-বিরতির সময় দ্রুত অন্ধকারে ডুবতে থাকে পচেফস্ট্রমের স্টেডিয়াম পাড়া। উইকেট ও মাঠের কিছু অংশ ঢেকে ফেলা হয়। পরে নামে ঝুম বৃষ্টি। শেষে দিনের খেলার সমাপ্তি। ৭ উইকেট হাতে রেখে এখনও ৩৭৫ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য সেটা ভীষণ স্বস্তিই!
রোববার চতুর্থ দিনে চা বিরতির আগেই দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে সাউথ আফ্রিকা। ৭ উইকেটে ২৪৭ রান তুলে। ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল তারা। শনিবার গুটিয়ে যাওয়ার সময় ৩২০ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। বড় ইনিংস গড়তে না পারার মাশুলে গুণতে হচ্ছে এখন।
ক্রিকেটীয় বাস্তবতার নিরিখে জয়ের সম্ভাবনা না থাকলেও ম্যাচটি ড্র করা অসম্ভব নয় এখনও! ম্যাচ বাঁচাতে সেজন্য বাকি ব্যাটসম্যানদের দারুণ কিছুই করে দেখাতে হবে। সঙ্গে বৃষ্টিও সহায়ক হয়ে দেখা দিতে পারে বলে স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে।
চারশ পেরোনো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই পথ হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ম্যাচ বাঁচাতেই যেখানে টিকে থাকতে হত প্রায় সাড়ে চার সেশন, সেখানে ইনিংসের চার বল গড়াতেই প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। রানের খাতা না খুলেই। দলীয় রানের খাতাও তখন খোলেনি। মরকেলের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বলে লাইন মিস করে সাজঘরের পথ ধরেন।
ওভারের শেষ বলে মরকেলের দ্বিতীয় আঘাত। এলবিডব্লিউ হয়ে বিপদ বাড়িয়ে যান মুমিনুল হক। মুখোমুখি প্রথম বলেই জোরাল আবেদনের মুখে পড়েছিলেন। পরের বলে সোজা সাজঘরে। যদিও যদিও টিভিরিপ্লে বলছিল, লেগস্টাম্প মিস করে বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। কিন্তু মুমিনুল রিভিউ নেননি। অপর প্রান্ত থাকা ইমরুলের ইশারাও তার রিভিউ না নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করেছে হয়ত।
সেই ইমরুলও বেশিদূর এগোতে পারেননি। রাবাদার বলে ৬ রানে দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন ডু প্লেসিস, সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। চা-বিরতির আগে মহারাজের বলে কট বিহাইন্ড ৩২ রানে।
নো-বলে বোল্ড হয়ে হাঁটা দেয়া মুশফিক টিকে আছেন দ্বিতীয় জীবন নিয়ে। ১৬ রান নিয়ে শেষদিনের পরীক্ষায় নামবেন। সঙ্গী পাবেন লিটন, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, মিরাজদের। তবে ম্যাচ বাঁচাতে হলে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে টাইগার অধিনায়ককেই।
এর আগে সকালে সফরকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে স্বাগতিকদের লিড এগিয়েছে তরতরিয়ে। টাইগার বোলারদের সাফল্য চার উইকেট তুলে নেয়া। প্রথমে কাটারে বাজিমাত করে মোস্তাফিজ ফিরিয়েছেন আমলাকে। পরে মুমিনুল সাজঘরে পাঠান ডু প্লেসিসকে। মুমিনুলের স্পিনে উইকেট এসেছে আরও দুটি।
দ্রুত রান তুলে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। বাধা হয়ে দাঁড়ান মুমিনুল। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেটটি তুলে নিলেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ করে। ডু প্লেসিস তখন ৮১ রানে।
মুমিনুলের বলটা স্টাম্প বরাবর ছিল। সুইপ করতে যেয়ে লাইন মিস করে ফেলেন ডু প্লেসিস। সেটিই মুমিনুলের সারপ্রাইজ দুই। প্রথমটি এসেছিল ২০১৩ সালে, চট্টগ্রাম টেস্টে আউট করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিজে ওয়েটলিংকে।
পরে দ্রুততর সময়ে আরও দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন মুমিনুল। টেম্বা বাভুমার (৭১) লেগসাইডে ওঠা ক্যাচটা সুপারম্যানের ভঙিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লাভসে নিয়েছেন লিটন। আর কুইন্টন ডি ককের (৮) উইকেটটিও নিয়েছেন লিটনের সহযোগীতায়। অফস্টাম্পের বাইরের বলে বেরিয়ে খেলতে গেলে ডি কককে স্টাম্পিং করেন লিটন।
দিনের প্রথম বাজি সেখানে নিজের ঘরে নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। শনিবার মার্করামকে যেভাবে কাটারে বোকা বানিয়েছিলেন, রোববার হাশিম আমলাকেও সেভাবেই সাজঘরে পাঠান ফিজ।
কাটার মাস্টার বলটা ফেলেছিলেন অফস্টাম্পের বাইরে। পরিকল্পনা মতই প্রলুব্ধ করলেন আমলাকে। গতি বৈচিত্র্যের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে অভিজ্ঞ প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান সাজঘরে। আমলাকে আউট করা বলটি অবশ্য গ্রিপ করেছিল খানিকটা বেশিই। ব্যাটের কানায় লাগার পর গ্লাভসে জমাতে ভুল করেননি উইকেটরক্ষক লিটন। ২৮ রানে ফেরেন আমলা।
মুমিনুলের তিনের পর মোস্তাফিজের ২টি ও শফিউলের একটি করে উইকেট প্রাপ্তি। মিরাজ দুই ইনিংস মিলিয়ে আড়াইশর কাছে রান বিলিয়েও উইকেটের দেখা পাননি। শেষদিনে অবশ্য সুযোগ থাকছে ব্যাটে বোলিং ব্যর্থতার কিছুটা পুষিয়ে দেয়ার।