পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমানো কিংবদন্তি অজি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নের ক্যারিয়ারে অর্জনের অভাব নেই। তবে তাকে ক্রিকেট ইতিহাসে অমরত্ব দান করেছে ‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’। তার করা অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ডেলিভারি বলা হয়ে থাকে।
১৯৯২ সালে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে হয়েছিল তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়েছিল। তবে ওয়ার্নের সেই অবিশ্বাস্য ডেলিভারির কথা বলতে হলে অবশ্য তার পরের বছর ১৯৯৩ সালে ফিরে তাকাতে হবে। অ্যাশেজ সিরিজে ইংলিশ ব্যাটার মাইক গ্যাটিং ছিলেন সেই হতভাগা, যিনি সেই বলে হয়েছিলেন বোল্ড।
কানের দুল পরা স্বর্ণকেশী লেগ স্পিনার ১৯৯৩-১৯৯৪ মৌসুমে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে অ্যাশেজ খেলতে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন। তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের নাম চেনাতে তিনি ছিলেন মরিয়া।
প্রতিশ্রুতিশীল ক্যারিয়ারে মাত্র ১১টি টেস্ট খেলাই ছিল তার অভিজ্ঞতা। অ্যাশেজ অভিষেকের সময় ওয়ার্নের করা প্রথম ডেলিভারি শুধুমাত্র বোল্ড হওয়া গ্যাটিংকে অবাক করে দেয়নি। জাদুকরী ডেলিভারি গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে হতবাক করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়ান স্পিন জাদুকর লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে বলটি পিচ করিয়েছিলেন। বলটি অপ্রত্যাশিতভাবে বাঁক নিয়েছিল। গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্পে বল চুমু খাওয়ার মতো আঘাত করে। হতভম্ব ব্যাটার বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
ধারাভাষ্যকাররাও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনারের এমন ডেলিভারি দেখে আঁতকে উঠেছিলেন। ওয়ার্নের নিখুঁতভাবে পিচ করা ডেলিভারিটি ‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’হয়ে ওঠে। যা একজন তরুণ ওয়ার্নকে তারকায় পরিণত করেছিল। স্টাইলিশ লেগ-স্পিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার স্মরণীয় অ্যাশেজ সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ওয়ার্ন ৪ উইকেট পান এবং ব্যাট হাতে করেন ৫১ রান । দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও চার উইকেট শিকার করেন। ওয়ার্নারের ধ্রুপদী বোলিং অজিদের ১৭৯ রানের বড় জয়ে পথ দেখায়। সেই অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে ৪-১ ব্যবধানে হারায় অস্ট্রেলিয়া।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে লেগ স্পিনারের জাদুকরি সেই ডেলিভারি দর্শকদের হতবাক করে দেয়। তার ডকুমেন্টারি ‘শেন’-এ ওয়ার্ন তার অমরত্ব পাওয়া সেই ডেলিভারিটিকে খেলাধুলার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় বলে মত দিয়েছিলেন।
‘আমি একটি পদক্ষেপ নেই। আমি বোলিং করি এবং বলটি ছেড়ে দিয়েছিলাম। সবকিছুই ধীর গতিতে ঘটেছিল। গ্যাটিং এটিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
এটি (বল) পিচ করেছিল, শুধু তার ব্যাট মিস করেছিল এবং অফ স্টাম্পের উপরের অংশটিতে লেগেছিল। অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম বল। আমার মধ্যে নিষ্ঠুর ভালোলাগা কাজ করছিল।’
বল অফ দ্য সেঞ্চুরিনিয়ে আইসিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওয়ার্ন জানিয়েছিলেন, কীভাবে বিশেষ এই ডেলিভারি তার জীবনকে ভালোর জন্য বদলে দিয়েছে।
‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি একটি অঘটন ছিল। সত্যিই, আমি আর কখনো এমনটা করিনি। কিন্তু আমি মনে করি এটাই (অঘটন) ছিল। একজন লেগ স্পিনার হিসেবে আমরা সবসময় একজন নিখুঁত বল করতে চাই।’
‘এটি আমার জীবনকে মাঠ প মাঠের বাইরে বদলে দিয়েছে। মাইক গ্যাটিং ইংল্যান্ডের দলের সেরা স্পিন বল খেলতে পারা খেলোয়াড় ছিলেন। তাই এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল।’
ওয়ার্নের মৃত্যু ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় ব্যাট-বলের খেলাটি একজন আইকনিক ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে ফেলল।