চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শুধু শোক প্রকাশেই দায় মুক্তি হবে?

শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারলেন না মিনু মিয়া। কিছু বর্বরের হাতে নির্মম গণপিটুনিতে আহত হওয়ার নয় দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার মারা যান তিনি। ২১ জুলাই টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ী গ্রামের ভ্যান চালক মিনু মিয়া পাশের উপজেলায় মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে নির্যাতনের শিকার হন।

আজ মঙ্গলবার সকালে টেপিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর তাকে দাফন করা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, তার জানায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এটা কি তার প্রতি করা অন্যায়ের জন্য অনুশোচনা? নাকি সেইসব অমানুষের প্রতি ধিক্কার, ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ? নাকি অসহায়, সহজ-সরল এক তরুণকে বাঁচাতে না পারার দায়?

এই ঘটনার অসহ্য, অসহনীয় আর অকল্পনীয় ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি, মিনু মিয়া ছেলেধরা নয়, এই সত্যটা বোঝাতে তিনি কম চেষ্টা করেননি। নির্মম নির্যাতনের পরও মুখে হাসি রেখে বারবার বলেছে, তার গ্রামের নাম, কিভাবে সেই হাটে এসেছেন, তার এলাকার কমিশনারের নাম ইত্যাদি সবকিছুই বিস্তারিত বলছেন। কিন্তু তবুও দয়া হয়নি কারো।

সেদিন আসলে মিনু মিয়ার পকেটে হাত দিয়েছিল একটি ছেলে। পকেটমার হিসেবে তাকে ধরেই ফেলেন মিনু মিয়া এবং তার সঙ্গি শাকের। কিন্তু উল্টো তাদেরকেই ছেলেধরা বলে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। এখানেই শেষ হলে হয়তো মিনু মিয়া বাঁচতে পারতেন। কিন্তু অমানুষদের বিকৃত উল্লাসে দ্বিতীয় দফায় তার উপর হামলে পড়ে। আর এতেই তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

মিনু মিয়ার এমন মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। মিনু মিয়া মরে গিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব জাতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্র-সরকার কি এর থেকে শিক্ষা নেবে? মিনু মিয়ার জন্য কি আমরা শোক প্রকাশ করেই দায়িত্ব এড়াবো? তাতে কি আমোদের গায়ে লাগা নিষ্ঠুর আর বর্বরতার কালিমা মোচন হবে? আমরা চাই, আর যেন কোনো মিনু মিয়া বা রেনুদের মতো নিরপরাধ মানুষের এমন পরিণতি না হয়।