চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শিশুরা ‘ফার্মের মুরগি’ হচ্ছে, খেলার মাঠ কোথায়?

“ঢাকা শহরে খেলার সুযোগ কম। শিশুরা ফ্ল্যাটে বাস করে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ, কিছু সময়ের জন্য যেন শিশুরা খেলতে পারে; এমন ব্যবস্থা করতে।”- জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য ভেবে দেখার মতো।

সুস্থ শিশু বলতে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ শিশুকেই বোঝায় না; শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে শিশুকে সুস্থ রাখতে হবে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শিশুর চিন্তার সৃজনশীল বিকাশ খেলাধুলার মাধ্যমে ঘটে, নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জিত হয়, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার সাহস বাড়ে, দেশপ্রেম জাগ্রত হয় এবং নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটে। তাই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে খেলাধুলার বিকল্প নেই।

ঘরের মধ্যে দেশের জনপ্রিয় ফুটবল ও ক্রিকেটের মতো খেলা সম্ভব না হওয়াতে তারা ধীরে ধীরে সেসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরীর শিশুরা খেলা বলতে বর্তমান সময়ে মোবাইল গেমসকে বুঝতে শুরু করেছে। এতে করে তারা শারীরিক ও মানসিক উভয়দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খেলাধুলার জন্য কোথায় পাঠাবে?

রাজধানীতে একসময় প্রায় প্রতি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কলোনিতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ছিল। সেখানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণরা খেলাধুলা করত। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। খেলার মাঠকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটত। এখন সেই সব খেলার মাঠ নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে যা হলো, তাতে করে রাজধানীতে শিশুদের খেলার মাঠের সঙ্কটের বিষয়টি নগ্নভাবে উঠে এসেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ওয়ার্ড রয়েছে ১২৯টি। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। এই তথ্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া যেসব মাঠ রয়েছে সেগুলোও নানা প্রক্রিয়ায় দখল নয়তো করপোরেট ক্লাব কালচার আর দলীয় হস্তক্ষেপে সাধারণের ব্যবহার সুবিধা বন্ধ।

রাজধানীর জন্য করা ড্যাপের খসড়ায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ১২ হাজার ৫০০ মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ বাস করে। সে হিসাবে ঢাকায় মাঠ দরকার ১ হাজার ৪৬৬টি। যা রাজধানীতে এক অর্থে অসম্ভব! এছাড়া নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ২৩৫টি মাঠের মধ্যে ১৪১টি রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি। ১৬টি সরকারি মাঠ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। এর বাইরে মাত্র ৪২টি মাঠ আছে, যেগুলো মোটামুটি সবাই ব্যবহার করতে পারে।

দেশের নীতি নির্ধারকরা ও নগর পরিকল্পকরা উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে শুধুমাত্র দালানকোঠা আর রাস্তা বানানোকেই হয়তো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু সেইসব দালানে বাস করা মানুষদের নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য গাছ আর বিকাশের জন্য খেলাধুলার মাঠের পরিকল্পনা সেইঅর্থে করছেন। এদিকে বিশেষ নজর দেয়া একান্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। নয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শুধু বলার জন্যই বলা হবে, যার কোনো বাস্তবিক গুরুত্ব ও প্রয়োগ হবে না।