আজকের সম্পাদকীয়তে আমরা যে ছবিটি ব্যবহার করেছি, তা রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ছবিটি ধর্ষণের পর নির্মম হত্যার শিকার সাত বছরের শিশু সামিয়া আক্তার সায়মার সহপাঠীদের। যাদের সাথে সামিয়া তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়ের শুরু করেছিল। কিন্তু এক নরপশু, পাষণ্ড আর মানুষরূপী হায়েনার বিকৃত লালসা তা মুহূর্তেই শেষ করে দিয়েছে। সেই হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি নিয়ে পথে নেমেছে এই কোমলমতি শিশুরা।
পাঠকদের কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন- নৈতিকভাবে আমরা এই ছবিটি প্রকাশ করতে পারি কিনা? আমরাও মনে করি, প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ছবি প্রকাশ করা না করার বিষয়টি আমাদের সামনে বড় রকম ইথিক্যাল ডিলেমা বা নীতিগত দিক থেকে উভয় সঙ্কট হলেও বাস্তব পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা তা প্রকাশ করেছি। বিশেষ করে ছবির শিশুদের অসহায় মুখ, শান্ত, নীরব ও প্রতিবাদী চাহনি আমাদের সব ধরনের নীতি-নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের চোখেমুখে নীরব কান্না বা ভয়ের অবয়ব দেখতে পাই।
তিন দিন আগে ওয়ারীর নিজেদের বাসার উপরের ফ্ল্যাটে খেলতে গিয়ে শিশু সামিয়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়। এই ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ঘৃণা, ধিক্কার আর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। সেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে সামিয়ার সহপাঠীরাও। কারণ আজকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কোনো শিশুর জন্যই নিরাপদ নয়। একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।
এটা কারো মুখের কথা নয়, শিশুদের নিয়ে কাজ করা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে শিশু ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সামিয়ার খুনির ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমেছে একদল অসহায় শিশু। তাদের চাহনিই বলছে, কতটা নিরাপত্তাহীনতা আর ভয়ের মধ্যে আছে তারা।
তাদেরকে এই ভয় থেকে মুক্ত করবে কে? সামিয়ার সহপাঠীরা যখন প্রশ্ন করবে, ‘ওকে কেন মেরে ফেলেছে?’ ‘কেন সামিয়া স্কুলে আসছে না?’ কিংবা ‘সামিয়ার কি হয়েছে?’ ‘ও কি দোষ করেছিল?’ এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারবো? না পারবো না; কারণ এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই আমাদের কাছে নেই।
আমরা মনে করি, এই শিশুদের প্রতিবাদ দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবাদ। ছোট্ট এই শিশুদের এমন প্রতিবাদের পরেও কি রাষ্ট্র ঘুমিয়ে থাকবে? আমরা ঘুমিয়ে থাকবো?