প্রথমবারের মত বাংলা ভাষার সিনেমায় অভিনয় করছেন ইয়াশপাল শর্মা। যার অভিনয় ঝুলিতে বলিউডের নানামাত্রিক চলচ্চিত্রের সাফল্যের পালক রয়েছে। ‘লগন’ চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে ‘গঙ্গাজল’, ‘গ্যাংস অব ওয়সিপুর’ হয়ে ‘রাউডি রাঠোর’ সব রকম চলচ্চিত্রে সমান স্বাচ্ছন্দ্য তার।
আর এই অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিল চ্যানেল আই অনলাইন। খুলনার পাইকগাছায় শিবসা নদীর পাড়ে বসে বলেছেন কথা। প্রসঙ্গ ছিল তৌকীর আহমেদ পরিচালিত এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত নতুন চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’, অভিনয় দর্শন এবং নানা বিষয়।
বাংলাভাষার চলচ্চিত্রে কখনও কাজ করনি। সেখানে কলকাতা বাদ দিয়ে একেবারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে, কেন?
দেখ, ভাষার জন্য আন্দোলন তোমরা করেছ এটা আমি জানি। যা ছিল অনন্য সাধারণ ঘটনা। আমার কাছে প্রস্তাবটি যখন আসে, তা ছিল পরিচালকের কাছ থেকে। গল্পের সামান্য ন্যারেটিভ। তাতেই আমি রাজি হয়ে যাই পিরিয়ড পিসটির সঙ্গে নিজেকে জড়াতে। তারপর যখন স্ক্রিপ্ট আমার হাতে আসে, তখন পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে অসাধারণ। এত সহজ করেও ইতিহাসের গভীর পাঠ তুলে ধরা যায়! একটি নতুন পরিমন্ডলে নতুন ভাষায় কাজ করার সুযোগ ছাড়ার পাত্র আমি নই। আর শিল্পের বা শিল্পীর কোন সীমানা নেই।
কিন্তু যখন ভারতে বলা হয় এই শিল্পী এদেশে কাজ করছে কেন কিংবা বাংলাদেশে বাঁধা তৈরি হয় অনেক কিছুতে অথবা পাকিস্তানে কোন চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায় যখন, তখন আপনার কথাটা কেমন যেন মনে হয়না?
আমি আমার বিশ্বাস থেকে বলেছি। আমি বিশ্বাস করি শিল্পীর কোন সীমানা নেই, ধর্ম নেই। তার একটাই ধর্ম শিল্পের চর্চা। যে কোন সামাজিক ইস্যুতে শিল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান যে অসহিষ্ণুতা তার জন্য দায়ী আমার মতে রাজনীতিবিদরা। যারা রাজনীতির স্বার্থে ধর্মকে কাজে লাগাচ্ছেন। এর বেশি কিছু বলার নেই।
১৯৪৭ এর দেশভাগের নির্মমতার সাক্ষী আপনাদের পরিবারও। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
একান্ত গোপন কিছু দুঃখ থাকে। সব দুঃখ সবসময় ভাগাভাগি করা যায় না।
আপনার বেশির ভাগ চলচ্চিত্রের চরিত্র বৈচিত্র্যময়। প্রবল বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতেও একটা আলাদা ছোঁয়া মেলে অভিনয় কারুকার্যে। চরিত্র বাছাইয়ের কোন ফর্মূলা মেনে চলেন?
সেরকমভাবে কোন ফর্মূলা নেই। আমাকে যেটা টানে সেটাই আমি করি। আমার দেখার দুনিয়া বেশ বৈচিত্র্যময়। গড়পড়তা ভাবিনি, ভাবতেও চাইনা আগামিতে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রটিতে কাজ করে কেমন লাগছে?
আমি এ ছবিতে কাজ করার আগে তৌকীরের দুটি ছবি ‘হালদা’, ‘অজ্ঞাতনামা’ দেখে নিয়ে তার সম্পর্কে ধারণার চেষ্টা করেছি। এখন কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে তিনি তার কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি স্বচ্ছ্ব। কী চান সেটি জেনে কাজ করেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, তার এ কাজটি বিশ্ব আসরেও তাকে একটি মর্যাদার আসন দেবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে ধারণা আছে? কিংবা দেখার অভিজ্ঞতা আছে?
আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেখেছি। আগে দেখিনি, এটা সত্য। তবে বাংলা ছবি দেখার কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। সত্যজিৎ রায় আর ঋত্মিক ঘটকের ছবি দেখেছি। এনএসডির স্টুডেন্ট হিসেবে দেখা আছে। যা আমার অভিজ্ঞতার অমূল্য সম্পদ।
আপনি বলিউডি ব্যস্ততার মাঝেও মঞ্চে নিয়মিত সময় দেন। কি করে সম্ভব?
আমার এখন ১১টি মঞ্চ নাটক চলছে বিভিন্ন মঞ্চে। তাতে নিয়মিত সময় দেই। তেমনি করে বলিউডেও সময় দেই ঠিক মত। আমার সিনেমা এবং মঞ্চের জীবনের সময় বরাদ্দ শতকরা ৫০ ভাগ করে। মঞ্চ আমার মনের অভিনয় ক্ষুধাকে নিবারণ করে। যার তুলনা নেই। যেখানে দর্শকের প্রতিক্রিয়া সরাসরি পাওয়ার অসাধারণ অভিজ্ঞতা মেলে। যা আর কোথাও মেলে না।
সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
চ্যানেল আই অনলাইনকেও ধন্যবাদ।