গত এক বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই খেলাপি হয়ে পড়ছে। শিল্পোদ্যোক্তাদের অধিকাংশই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছে না, ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িছে ৫৭ হাজার ২০১ কোটি টাকায়। যা এ খাতে বিতরণ হওয়া ঋণের ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৭০২ কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের চেয়ে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার বেশি। এই হার সার্বিক খাতের গড় খেলাপি ঋণের হারেও চেয়েও বেশি। গত জুন পর্যন্ত সার্বিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ১১ ছিল ৬৯ শতাংশ।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একক খাত হিসেবে শিল্পে ব্যাপকভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তাই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে কমে যাচ্ছে ব্যাংকের প্রকৃত আদায়। পাশাপাশি ঋণের অর্থ আটকে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর নতুন করে বিনিয়োগ করার সক্ষমতাও। ফলে কমছে ব্যাংক খাতের আয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিল্প খাতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়েছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর পরেই বেসরকারি ব্যাংকের বেড়েছে ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকের ১ শতাংশ ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ খাতে খেলাপি ঋণ স্থিতির দিক থেকেও এগিয়ে বড় শিল্প উদ্যোক্তারা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে বড় শিল্পে এ হার দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ ছাড়া মাঝারি শিল্পে ২২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ক্ষুদ্রশিল্পে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিল্প খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। আর আদায় হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছর শেষে এ খাতে বকেয়া ঋণ স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে শিল্প খাতে বকেয়া ঋণ স্থিতি বেড়েছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরে এ খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ছিল ৬০ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশ।