প্রশ্নপত্র ফাঁস যখন জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা প্রায় শূন্যের পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় এর সুফল দেখা গেছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের অজুহাতে এখন নতুন করে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিক, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় তারা হুট করেই নানা পরিবর্তন আনছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তহীনতার চূড়ান্ত পর্যায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন রাখা না রাখার বিষয়ে একেকবার একেক কথা বলা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিকে বলা হয়েছে, এমসিকিকিউ থাকবে, অথচ এখন শিক্ষাবর্ষের প্রায় অর্ধেক সময়ে এসে বলা হচ্ছে- এমসিকিউ থাকবে না।
জেএসসি’র ক্ষেত্রেও একই ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। শুরুতে এমসিকিউ থাকবে না বলা হলেও এখন বলা হচ্ছে এমসিকিউ থাকছে। শুধু প্রাথমিক কিংবা জেএসসি নয়, সিলেবাস এবং মানবণ্টনসহ নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় এসএসসি এবং এইচএসসি’তেও।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার যৌক্তিকতা অবশ্যই রয়েছে। তবে সেটা যেন কখনোই শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য হুমকির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। হুটহাট করেও যেন কিছু না করা হয়। মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে লাখ লাখ শিশুর শিক্ষার প্রশ্ন জড়িত।
আমরা মনে করি, এসএসসি এবং এইচএসসি’র ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ২ বছর আগে গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। প্রাথমিক এবং জেএসসি’তে অন্তত এক বছর আগে। কারণ, এমনটা না হলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ে। এছাড়া পরীক্ষার আগে তাদের প্রস্তুতি গ্রহণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে। এতে তাদের যথাযথ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমনটা আমাদের কখনোই কাম্য নয়।
তাই এ বিষয়ে ‘তুঘলকি সিদ্ধান্ত’র বদলে খুব ভেবে-চিন্তে সংশ্লিষ্টদের সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলতে পারে না।