শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আগ্রহ না থাকার একটি বড় কারণ বেকারত্ব বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, আজকে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার যেভাবে বাড়ছে। সেই বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে না। দেখা যাবে শিক্ষার্থীরা সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। তার কারণ হচ্ছে তার জন্যে চাকরি হচ্ছে খুব জরুরী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের হিসাব কিভাবে হয়েছে সেটা আমরা নিশ্চিত জানি না। আমরা সব তথ্য সরবরাহ করতে পেরেছি কি না জানি না। টাইমস হায়ার এডুকেশনে গবেষনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আবার অন্য একটিতে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস রুমের শিক্ষা এবং শিক্ষকদের গবেষণা এই দুটি জিনিসই খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গবেষণা না করি তাহলে কী জ্ঞান সরবরাহ করব? কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষা দান। এই শিক্ষা দানের বিষয়টি যদি আমরা দেখি তাহলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে সমস্যাটা অনেক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ কমেছে। কেবল শিক্ষা দিলে হবে না দেখতে হবে যে ছেলে-মেয়েরা সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে কি না।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার সমস্যাকে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করতে পারব না। আমাদের দেখতে হবে গোটা আর্থ সামাজিক অবস্থা। এইখানে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী সেটাও দেখতে হবে। এটা হলো প্রথম কথা। দ্বিতীয়ত আমাদের সমাজে জ্ঞানের গুরুত্ব কমে গেছে। জ্ঞান দরকার হয় না জ্ঞান ছাড়াই অনেক কাজ করা যায়। সেই ক্ষেত্রে জ্ঞানের যদি মর্যাদা না থাকে সমাজে তাহলে শিক্ষার আগ্রহ কেমন করে বাড়বে, শিক্ষার মান কেমন করে বাড়বে।’
শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় আছে শিক্ষা খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ সেটা বাড়ানো দরকার। জাতীয় বাজেটের শতকরা অন্তত ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। এটি খুবই যুক্তসঙ্গত দাবি এবং আমাদের জিডিপির অন্তত দুই ভাগ শিক্ষাখাতে দেওয়া উচিত। এগুলো না বাড়ালে আমরা শিক্ষার মান বাড়াতে পারব না।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি কিউএস র্যাংকিং নামে একটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। দুটো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই র্যাংকিং করে। একটি টাইমস হায়ার এডুকেশন আরেকটি কিউএস র্যাংকিং। কিউএস র্যাংকিং সমীক্ষা দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম অবস্থানে। হায়ার এডুকেশন দেখিয়েছে ৪১৭টির মধ্যে নেই। এই র্যাংকিং গুলো কোন মানদণ্ডে হয় সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকবে। কিন্তু একটি বিতর্কের বিষয় বলা যায় কিউএস র্যাংকিং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) লন্ডনভিত্তিক কিউএসের একজন প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। এতে আমরা যদি তথ্য দেই তাহলে তারা আমলে নিয়ে আমাদেরকে মূল্যায়ন করবেন বলে জানানো হয়। তার মানে আমাদের তথ্যগুলো/ডটাগুলো তাদের কাছে নেই। সেগুলো তাদের কাছে উপস্থাপিত হলে এই বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে আওতাভুক্ত হবে। এটা হলো টাইমস হায়ার এডুকেশনের কথা। আর কিউএস র্যাংকিং প্রতিবছর ফ্রি সোর্সের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যায়ন করে থাকে। গতকাল তারা প্রকাশ করে কিন্তু আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে প্রতিবছর চিঠি দিয়ে জানায়। এ বছর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম।’
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং ডাকসু নেতাদের মতামত আমলে নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সকল মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রতিফলন ঘটুক। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ এর মধ্যে আছে কি ৫০০ এর মধ্যে নাই, ১২৭তম আছে নাকি ১০ এর মধ্যে নাই সেটি নয়। আমরা চাই ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠতে, ক্রম অগ্রগতি ক্রম উন্নয়ন ঘটাতে। এবং সেটি যদি ঘটাতে চায় তাহলে এইখানে অভিমত ব্যক্ত হয়েছে সেই অভিমতসমূহের প্রতিফলন রাখতে হবে।’
বিটিভির পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সেফোর্ড। এখন কেন সেটা অবমূল্যায়িত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কেন আমরা পৌঁছাতে পারছি না সে ব্যাপারে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের যে মতামত তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবিরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহদী আল মুহতাসিম নিবিড়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাংবাদকি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আফতাব উদ্দিন মানিক।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাকসু নেতৃবৃন্দ, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়বস্তুর ওপরে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির।