পুলিশের সামনে দিয়েই চলছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকের আসনে থাকা ব্যক্তির ছিল না লাইসেন্স। উল্টোপথে যাচ্ছিল প্রভাবশালী মন্ত্রীর গাড়ি। বুধবার এসব অনিয়মের প্রতিবাদের এক পর্যায়ে গাড়ির বৈধ কাগজপত্রের পাশাপাশি চালকদেরও লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
যদিও এসব কাজ নিয়মিতই করার কথা পুলিশের। কিন্তু দিনের পর দিন সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
বুধবার দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা অবরোধের পাশাপাশি এসব কাজ করে যায় শিক্ষার্থীরা। এমনকি বিকালে অবরোধ তুলে নেয়ার পরও লাইন্সেস আর বৈধ কাগজপত্র তল্লাশিতে ব্যস্ত থাকে তারা।এদিন বিকেল চারটার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার মোটরবাইকের লাইসেন্স ও বাইকের পেছনের আরোহীর হেলমেট না থাকায় তাদের মোটরবাইক আটকে ফেরত পাঠিয়েছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, সকাল থেকেই আমরা প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স চেক করেছি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই যেতে দেইনি। পুলিশের একটি বাইক যেতে চাইলে আমরা লাইসেন্স চাই। তারা দেখাতে ব্যর্থ হয় এবং বাইকের পেছনের আরোহীর হেলমেট না থাকায় তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে না দিয়ে ফিরতি পথে পাঠিয়ে দেই।
চালকের লাইসেন্স না থাকলে শিক্ষার্থীরা গাড়িসহ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সোপর্দ করছে। আর সবকিছু ঠিক থাকলেই গাড়িগুলো যেতে দিচ্ছেন। আর বিষয়টি বেশ ভালোভাবে উপভোগ করছেন উৎসুক জনতা। গাড়ি আটক হলে ফুটপাতে থাকা জনতা করতালি দিয়েও সমর্থন দিয়েছেন।
রাজধানীর সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে থেকে নিউমার্কেট-ফার্মগেটমুখী লেগুনাগুলোই শিক্ষার্থীদের প্রধান টার্গেট ছিল। ৫টার দিকে নিউমার্কেট থেকে ফার্মগেটগামী নম্বরবিহীন একটি লেগুনা আসতেই শিক্ষার্থীরা তা থামার সংকেত দেয়।
পরে চালক রুবেলের কাছে লাইসেন্স চাইলে সে দেখাতে পারেননি। গাড়ির কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে শিক্ষার্থীরা লেগুনার যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করে।
শিক্ষার্থীরা লেগুনার চাবি আটক করে নিকটস্থ পুলিশ বক্সে জমা দেন। এরপর পুলিশকে সেই গাড়িটি জব্দ করে সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ইব্রাহীম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গণপরিবহনের অরাজক পরিস্থিতির প্রতিবাদে আমাদের এ উদ্যোগ। আমরা আমাদের কোনো ভাই-বোনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে চাই না। আমরা চাই দেশে কোন অবৈধ চালক ও অবৈধ গাড়ি থাকবে না।
এর আগে সচিবালয় থেকে ফেরার পথে শাহবাগ এলাকা দিয়ে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন।
এ সময় মন্ত্রীর সাথে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ি নিয়ে যেতে দিতে অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা তীব্র চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আইন সবার জন্য সমান’, ‘আইন সবার জন্য সমান’।
এক পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদও গাড়ি থেকে নেমে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাকে সোজাপথে যেতে বাধ্য করেন।এছাড়াও লাইসেন্স ছাড়া পুলিশের গাড়ি চালক, পুলিশের মোটর সাইকেলও তল্লাশি করে শিক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জড়ো হয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না। বিভিন্ন স্থানে গাড়ীর চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করছে শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং এবং জসীমউদ্দীন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে মাইলস্টোন কলেজ, স্কলাস্টিকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার পর ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।