চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল ফাস্টফুড জনপ্রিয় কেন

যারা খেতে ভালোবাসেন, আদর করে তাদেরকে বলা হয় ভোজনরসিক। তারা যেমন খেতে ভালোবাসেন একইভাবে আবার অপরকে খাওয়াতেও ভালোবাসেন। আর এসব ভোজনরসিকদের সামাল দিতে রাজধানী জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাজারো রেস্টুরেন্ট আর ফাস্টফুডের দোকান। শুধু তাই নয়; এসব খাবারের চাহিদা থাকায় এখন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতেও দেখা যায় ছোটো-ছোট খাবারের দোকান।

অবশ্য এসবকে ছাপিয়ে রাস্তার পাশে আকর্ষণীয় সব দোকান সাজিয়ে বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসছেন ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল) দোকানিরা। ভ্রাম্যমাণ বলার কারণ, নানা সমস্যায় যখন-তখন তাদের দোকান গুটিয়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়। যারা এক জায়গায় বসে ব্যবসায় করেন সেখানে থাকার জন্য সপ্তাহ যেতে না যেতে বহু কায়দা অবলম্বন করতে হয় তাদের।

তবে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা যেখানেই বসুক না কেন ভিড় তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। রাজধানীর ধানমণ্ডি, বেইলী রোড়, মোহাম্মদপুরসহ বহু জায়গায় খাবারের জন্য বেশ বিখ্যাত। ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন নামী-দামি ব্র্যান্ডের রেস্টুরেন্টে থাকলেও ওইসব এলাকা খাবারপ্রিয় মানুষদের কাছে জনপ্রিয় উঠছে এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান।%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%a1%e0%a7%a7অার তাদের কাস্টমার মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কম টাকায় মুখরোচক খাবারের জন্য তারা ভিড় করেন এসব দোকানে। দোকানগুলোর নামের সঙ্গে খাবারের নামও বেশ ব্যতিক্রম। খাবারের মান নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি থাকে না খাবার প্রেমীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সজিব নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ দোকানের কাস্টমার। তার মতে, কম টাকায় সেরা খাবার পাওয়া যায় এসব দোকানে। মান নিয়েও তার  তেমন কোনো অভিযোগ নেই। বলেন, এখানকার খাবারগুলো একটি কারণে ভালো লাগে; সেটি হলো পরিবেশন। খুব আকর্ষণীয়ভাবে খাবারগুলো পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও যখন অর্ডার দেওয়া হয় তখনই খাবারটি তৈরি করে দেয়া হয়, এ জন্য খাবারটি খেতেও খুব সুস্বাদু লাগে।%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%a1এমন করে তো রেস্টুরেন্টগুলোতেও খাবার তৈরি করা হয়, সেখানে না গিয়ে রাস্তার পাশের খাবার কেন? এ প্রশ্নে সজিব হেসে বলেন, সাধারণত সবাই আমরা ধরে নেই ভালো রেস্টুরেন্ট মানেই ভালো খাবার। কিন্তু কথাটি একদম ভুল। আসল কথা হলো কম টাকায়ও আপনি রেস্টুরেন্টের চেয়েও ভালো খাবার এখানে খেতে পারেন।

সজিবের উত্তর ধরে নীলা নামে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্ন রেস্টুরেন্ট নাকি ভ্রাম্যমাণ কোনটার খাবার আপনার পছন্দ?

নীলা সহজেই তার উত্তরে বললেন, অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ দোকানের খাবার। একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমার বার্থ ডে উপলক্ষে বন্ধুদের ট্রিট দিবো বলে নামি-দামী একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম ২২০ টাকা করে বার্গার অর্ডার দিলাম, নিলাম ও খেলাম। কিন্তু বিশ্বাস করেন মুখে দিয়ে একটুও মনে হয়নি এটা বার্গার খেলাম নাকি অন্য কিছু। মেজাজ গরম করে কোনো মতে গিলে বের হলাম সেখান থেকে।

“তখনই আমার একবন্ধু বললো চল তোকে রাস্তার পাশের বার্গার খায়াবো। আমি তো তেলে বেগুনী জ্বলে উঠলাম। কিন্তু ওকে বিশ্বাস করে সঙ্গে গেলাম। ও আমাকে বার্গার খাওয়ালো, বিশ্বাস করেন এতো মজা, আমি শুধু অবাক হয়ে রইলাম। দামটাও খুব বেশি নয় মাত্র ১২০টাকা। আসলে নামি রেস্টুরেন্টগুলো নামেই চলে তবে কিছু রেস্টুরেন্ট তো অবশ্যই ভালো।”%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%a1%e0%a7%a8যারা এমন ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান খুলে হাজারো মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন, ‘মামা অনেক মজা হইসে’ এমন শুনতে কেমন লাগে?

উত্তরে এক ভ্রাম্যমাণ দোকানি শরীফ বলেন, ‘খুব ভালো লাগে যখন আমার তৈরির খাবার খুব পছন্দ করে। আমার দোকানে অনেকেই আসে যারা আমার পুরানো কাস্টমার। সত্যি কথা বলতে টাকা উপাজর্নের পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসা পাওয়া কিন্তু কম সৌভাগ্যের ব্যাপার না।’

প্রতিদিন কত টাকা আয় করেন? হাসিমাখা মুখে শরীফের উত্তর- ‘বেচা কেনা করে লাভ দু’হাজার টাকার মতো থাকে। পরিবার ও ছেলেমেয়ের পড়াশুনা চলে যায় এ আয় থেকে। মাঝে মধ্যে একটু খারাপ যায় যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধ থাকে।’

ভ্রাম্যমাণ ফাস্টফুডের দোকানে শুধু বার্গার, সাবওয়ে, শর্মাই নয়, খুব অল্প টাকায়  কোল্ড কফি, নানা রকমের জুসও খুব জনপ্রিয়।

রেস্টুরেন্টের তুলনায় এসব দোকানের ফুচকা, ঝাঁলমুড়িসহ মুখরোচক সব খাবার ভোজনরসিকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

ছবিগুলো তুলেছেন: তানভীর অাশিক