১২ সেপ্টেম্বর ২০২১। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর পর আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে উৎসবমুখর পরিবেশে। বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। কথায় বলে এ দেশে বারো মাসে তেরো পুজা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ‘হাজার বছর ধরে এদেশে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলে মিশে নানানরকম উৎসব গুলো নানারঙে পালন করে আসছে। তবে বিজাতীয়রা বহুবার নিজেদের স্বার্থে আমাদের সম্প্রীতির উপর, সংস্কৃতির উপর বাঁধা সৃষ্টি করেছে।’ যাহোক আজকের আলোচ্য বিষয় এমনটি নয়। আমাদের গর্বের জাতীয় উৎসব আছে অনেক। আছে ধর্মীয় উৎসব। বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখ। আমাদের এতসব উৎসবকে ছাড়িয়ে ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা মহা সমারোহে যেন এক মহোৎসব।
১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনায় দেড় বছরের অধিক সময় বন্ধ রাখা হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মহামারির কারণে। এই সময়টি ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যত প্রকার ক্ষতি হয়েছ তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোমলমতি শিশু কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা কঠিন। পূর্ব থেকেই আমাদের দেশে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য আর অশিক্ষার কারণে শিশু সন্তানকে কর্মের উপর, শ্রমের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। উপার্জন করতে পেরে এইসব শিশুরা হাতে টাকা পেয়ে কালক্রমে অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে। শিশুশ্রম নিষেধ সত্বেও এটি কার্যত বন্ধ নেই। দেখা যায় ১০/১২ বছরের শিশু বাসের হেল্পার,চায়ের স্টলে,শপিংমলে আরও নানান কাজে নিয়োজিত। এমনটি তো করোনা পূর্ব চিত্র। বনর্তমানে ঝারেপড়া শিক্ষার্থীর অবস্থান কোথায় ঠেকবে! ইতিপূর্বে বাল্যবিবাহ রোধ অনেকটাই এগিয়ে চলছিল। ভালো লাগার বিষয়, কোমলমতি কিশোরী নিজেরাই কয়েকটা বাল্য বিবাহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিল।
করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্য বিবাহ নেড়েছে। গ্রামে আত্মীয় – প্রতিবেশির মধ্যে কয়েকটা বাল্য বিবাহ হতে শুনলাম। ২০২০ সালে এস.এস.সি পাশ দুই জন মেধাবী ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেল। এইচএসসি অটো পাস এক ছেলেকে অভিভাবক শখ করে বিয়ে দিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থীর সাথে। এ তো গেল গ্রামের কথা। রাজধানীর উত্তরায় এক ধনীর দুলালীকে বিয়ে দেয়া হলো শুক্রবার। মেয়েটি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী, জেএসসি-তে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনলাইন ব্যবস্থা করা হয়েছে যা মন্দের ভালো। তবে দেশের অধিকাংশ শিক্ষর্থীর পক্ষে এই সুযোগ গ্রহণ সম্ভব হয় নাই। ছাত্র ছাত্রীরা মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে পড়ালেখার অজুহাতে মেতে রয়েছে গেম খেলায়। যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পরিবর্তে বরং হয়েছে বিপর্যস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় স্থানে। সরকার কতৃক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা, পক্ষে বিপক্ষে মতামত। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে আপনার সন্তানের প্রাণহানি ঘটলে , আপনার পৃথিবী অন্ধকার। অন্যের কাছে একটি সংখ্যা মাত্র।
তবে পরবর্তীতে সংক্রমণ বাড়ার আশংকা থাকলে কিংবা বাড়লেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া কতটা সমীচিন হবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এই আবস্থায় প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নব নব কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিক সংখ্যায় শিফটিং ক্লাস এবং ভবন বাড়ানো সেই সাথে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। প্রয়োজনে অস্থায়ীভাবে খোলা মাঠে হলেও পাঠদান অব্যাহত রাখা আবশ্যক।
আজকের এই উৎসব মূখর পরিবেশে ছোটাছুটি , কোলাহলের মধ্যে শিশুরা প্রানবন্ত হয়ে উঠুক। সকল শিক্ষার্থী ফিরে পাক প্রাণের স্পন্দন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)