বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে ‘বাংলাদেশে গণহত্যা বিতর্কের রাজনীতি’ শিরোনামে এক লেখা এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নিজের ব্লগে এর আগেও একাধিকবার প্রশ্ন তোলেন বার্গম্যান। এমনকি যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার দায়ে তাকে কারাদণ্ডও দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একই সঙ্গে করা হয় অর্থ জরিমানা।
বার্গম্যান তার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘নয় মাসের যুদ্ধ ছিলো খুবই নৃশংস এক ঘটনা। সূত্র মতে, এই যুদ্ধে তিন লাখ থেকে ৩০ লাখ মানুষ নিহত ও লাখ লাখ মানুষ আহত হয়।’
এছাড়া বিভিন্ন বই ও তার লেখকদের বরাতে শহীদের ভিন্ন ভিন্ন ও বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিয়েছেন তিনি। ওই লেখায় শহীদদের সংখ্যার সাথে বিহারী ও পাকিস্তানপন্থিদের নিহত হওয়ার কথাও তুলেছেন বার্গম্যান।
তিনি আরো লিখেছেন, এই নিহতের সংখ্যা নিয়ে এখন কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলাও সম্ভব না। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতার বিরুদ্ধে নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের কথা উল্লেখ করে বার্গম্যান লিখেছেন, বর্তমান সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এরই মধ্যে চারজনের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। আরো ২৬ জনের পূর্ণাঙ্গ রায় হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিচার প্রক্রিয়ার সঠিক পদ্ধতির অভাবে ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই আদালত জনপ্রিয় বলেই দেখা যাচ্ছে।
আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করে নিজে সাজা পাওয়ার কথাও লেখায় উল্লেখ করেছেন বার্গম্যান। তার লেখায় উঠে এসেছে শহীদের সংখ্যা নিয়ে করা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা মন্তব্যের প্রসঙ্গও।
বার্গম্যান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা এরই মধ্যে হুমকির মুখে। উগ্র ইসলামপন্থীরা সেক্যুলার ব্লগারদের হত্যা করে সেটা আরো প্রকট করছে (এর মধ্যে আছে পত্রিকার সম্পাদককে হেনস্তা করার মতো ঘটনা)।’
নিবন্ধের শেষে তিনি লিখেছেন, ‘প্রস্তাবিত গণহত্যা আইন স্বল্প মেয়াদে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য বিনামূল্যের এই অভিব্যক্তি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’