চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শহিদ কবি মাহতাব উদ্দিন স্মৃতিতে অম্লান

জয়পুরহাটের কবি, লেখক, গীতিকার, সংগীতশিল্পী, সংগঠক ও প্রগতিশীল রাজনীতি সচেতন একজন মানুষ ছিলেন শহীদ মাহতাব উদ্দিন। স্বদেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর মানুষের প্রতি ছিল তার গভীর মমত্নবোধ আর নিবিড় ভালোবাসা।

১৯১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাবা হাবিবুল্লাহ আহমেদ ও মা জমিরন বেগম দম্পতির ঘর আলো করে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়ায় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাহতাব উদ্দিন। তিনি ১৯৩৭ সালে জেলার কালাই এম ইউ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা জুবিলি কমার্শিয়াল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৩৮ সালে ডিপ্লোমা পাস করে রেলওয়ের ট্রেন কন্ট্রোলার পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে স্টেশন মাস্টার হন। চাকরি জীবনের শেষ কর্মক্ষেত্র ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। এছাড়াও তিনি বিহার,কাউনিয়া, তিস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে চাকরি করেছেন।

পেশাগতভাবে মাহতাব উদ্দিন সরকারি চাকরিজীবি হলেও দাপ্তরিক কাজের বাইরে পুরো সময়টা জুড়ে তিনি নিবেদিত থাকতেন সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।

শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিলো মাহতাব উদ্দিনের। লিখেছেন কবিতা, ছড়াসহ প্রচুর গান । তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সরকারবিরোধী কবিতা লিখে স্বকণ্ঠে আবৃতি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত হন। জারি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ প্রেমযাত্রা” ছাড়াও ১৯৬৬ সালে “আলো” কাব্য , ভ্রমণকাহিনী “সোনাহাট” ও “স্বর্ণকালীর উপাখ্যান” নামে আরও দুটি গ্রন্থ প্রকাশ পায়। গায়ক হিসেবেও তার বেশ নাম-ডাক ছিলো।

১৯৬৪ সালে কুড়িগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে স্থানীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কুড়িগ্রাম তথ্য মজলিশ’ কবি মাহতাব উদ্দিনকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাহতাব উদ্দিন কর্মরত ছিলেন ঠাকুরগাওয়ে। একাত্তরের ২২ এপ্রিল রেলের আবাসিক এলাকার বাসভবন থেকে অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে। পরে ঠাকুরগাও চিনিকলের গণকবরে তার লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। অনেক খোজাখুজি করেও পরিবারের লোকজন আজো তার লাশ খুজে পাননি।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহিদ মাহতাব উদ্দিনের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে তাদের পরিবারে কাছে একটি পত্র ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন।

রাজধানীর কমলাপুরে রেলস্টেশনের শহীদ স্মৃতিসৌধে শহীদের তালিকায় এখনো রয়েছে জয়পুরহাটের এই বীর সন্তানের নাম। এছাড়া স্বাধীনতার পরবর্তী পরিবারের উদ্যোগে জয়পুরহাট শহরের বাইপাসে বানিয়াপাড়া এলাকায় তার স্মরণে ‘শহীদ কবি মাহতাব উদ্দিন সড়ক’ নামে একটি সড়ক এবং শহরে শহীদ কবি মাহতাব উদ্দিন বিদ্যাপীঠ’ নামে একটি বিদ্যালয়ের (প্রথম থেকে দশম শ্রেণি) নামকরণ করা হয়েছে।

পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য, দেশের এই গুণীজন শহীদ কবি মাহতাব উদ্দিন স্মরণে জেলায় সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ আজতক দেখা যায়নি। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না বা চিনেন না তাকে। আগামীতে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস সরকারিভাবে পালনের লক্ষে করণীয় সবকিছুই করবেন জেলা প্রশাসন সুধিমহল এমনই প্রত্যাশা করেন।