ব্রিটিশবিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামে শরীয়তপুরের নামকরণ করা হয়। এই জেলার আয়তন ১১৮১.৫৩ বর্গকিলোমিটার। যেখানে রয়েছে ৬টি উপজেলা ৭টি থানা ও ৫টি পৌরসভা। জেলা হিসেবে ১৯৮৪ সালে আত্মপ্রকাশ করলেও এ অঞ্চলটি সৃষ্টির প্রথম হতেই বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় সকল ব্যাপারেই বিকশিত হতে থাকে।
ইতিহাসের আদিকাল হতেই বিভিন্ন সামন্ত প্রভু ও রাজা দ্বারা এ অঞ্চল শাসিত হয়ে এসেছিল। শরীয়তপুরের ৩টি আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবসময়ই বিএনপির চাইতে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচন এলে ভোটাররা দলভেদে ভোট দিতে গেলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাদের সেই সুযোগ হয়নি। শরীয়তপুর ১ পালং জাজিরা আসনে ভোট হলেও শরীয়তপুর ২ নড়িয়া সখিপুর ও শরীয়তপুর ৩ ভেদরগঞ্জ ডামুড্যা গোসাইরহাট এই আসন দুটিতে ভোট গ্রহণ হয়নি। কোন প্রার্থী না থাকায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে যায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই সময়ে দেশের অন্যান্য স্থানে ব্যাপক শোডাউন হলেও শরীয়তপুরে পরিলক্ষিত হয়েছিল তার ব্যতিক্রম। রাজনৈতিক দলগুলো সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঢাকায় দলের উর্ধ্বতন মহলে লবিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিরোধী দল বিএনপি তারাও চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা আসনগুলো দখলে নেয়ার। পরক্ষণে তারা আর পেরে ওঠেনি। নির্বাচনের পরেও তাদের ব্যক্তি ব্যস্ততা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। জনগনের জন্য উন্নয়ন মূলক কাজ করার মত তাদের সময় হয়ে উঠেনি।
১৯৯২ সাল পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত পশ্চাদপদ ছিল এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। সারা জেলার মধ্যে মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকা ছিল। তখন জেলাটি নতুন করে সৃষ্টি হওয়ার ফলেই ওই ধরণের অবস্থা ছিলো। তবে জেলা সৃষ্টি হওয়ার ফলে ক্রমে রাস্তা ঘাটের উন্নতি হচ্ছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত অবশ্য প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি প্রায় অধিকাংশ গ্রামের সাথেই সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ সালের এই সময়টাতে শরীয়তপুরে যত উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে সবটাই দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের হাত ধরে। আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী থাকাকালীন ওই সময়টাকে শরীয়তপুরের উন্নয়নের স্বর্ণযুগও বলা হতো।
শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা)
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিএম মোজাম্মেল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। কিন্তু এই সময়ে শরীয়তপুরে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক সুবিধা পায়নি শরীয়তপুর পৌরবাসী। নানান সমস্যায় জর্জরিত ৩২ বছরের পুরানো এ পৌরসভায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছিল বড় বড় গর্ত, ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ছিল না তেমন কোন ডাস্টবিন ও পয়ঃনিষ্কাষণের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যেতো পৌর শহরের অধিকাংশ আবাসিক এলাকা। এর ফলে দেখা বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয় পানিবাহিত রোগ।
২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় রূপান্তর করে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তারপর দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য কোন ছোঁয়া লাগেনি শরীয়তপুর পৌরসভায়। বর্তমানে পৌরসভাটিতে প্রায় ১ লাক্ষ মানুষের বসবাস। এই জনসংখ্যার ব্যবহারের জন্য পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কাগজ পত্রে মাত্র ১৫টি ডাস্টবিন স্থাপন করা হলেও তা চোখে দেখা যায় না। শরীয়তপুর পৌর শহরের অলিতে গলিতে ময়লা আবর্জনার স্তুপের পচা দুর্গন্ধে নানান সমস্যায় পৌরবাসী। বারবার অভিযোগ করে কোন সমাধান না পেয়ে ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা।
ড্রেনেজের ব্যবস্থা নামে মাত্র থাকায় সাধারণ বৃষ্টি হলেই পৌর এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয় পানিবাহিত রোগ। পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকার রাস্তা মাটির। আবার অনেক এলাকায় নেই রাস্তা ঘাট। বেশির ভাগ সড়কের দেখা দেয় বড় বড় গর্ত। এর ফলে সৃষ্টি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশের। নতুন করে ড্রেন নির্মান করার জন্য রাস্তার দুইপাশে গর্ত করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন কোন কাজ না করায় প্রায় গর্তের মধ্যে পড়ে আহত হন অনেকেই।
পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য বিশাল এ পৌরসভায় মাত্র ৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মান করা হয়। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় সব ড্রেনই এখন ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে যায় পৌরসভার নিরালা, শান্তিনগর, পালং, দাসাত্তা, কলেজ রোড, শিল্পকলা, ঋষিপারাসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকা। সন্ধ্যার পর আলোর অভাবে পৌর শহর রূপান্তরিত হয় অন্ধকারের ভুতুরে নগরীতে।
পৌরসভাকে রাতে আলোকিত করার জন্য ২০০৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ২ হাজার ২ শত ল্যাম্পপোষ্টে বাতি স্থাপানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এর প্রায় সবগুলোই বিকল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। কর্নেল অব. শওকত আলী এমপির নির্বাচনি এলাকা নড়িয়া সখিপুর থানায় বিগত বছরে পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কবলে পাকা সড়ক, লঞ্জঘাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাজার, হাসপাতাল, বাজার, ব্রিজসহ ফসলি জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করে ওই সব পরিবারগুলো। কিন্তু ভুক্তভোগিরা কখনও সরকারি অনুদান পায়নি। এমনকি এমপি বিভিন্ন সময়ে তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার নির্বাচনি একই এলাকার প্রতিটি রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা, সখিপুর থানার সড়ক গুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ হওয়ার কারনে দৈনন্দিন যান চলাচলের ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা গুলো সংস্কারের অভাবে রাস্তা গুলির মাঝ খানে তৈরি হয়েছে বিশাল আকৃতির গর্ত ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে চলছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
সখিপুর থেকে কার্তিকপুর বাজারে যাতায়াতের রাস্তার অবস্থা মারাত্মক খারাপ হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল। ছোট খাটো যান চলাচল করলেও সাধারণ মানুষের ভাড়া গুনতে হয় দ্বিগুণ শুধু ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর)
এ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল অব. শওকত আলী এমপি। সংসদের এই সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল অব. শওকত আলী এমপি এ আসন থেকে ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছেন তিনি বয়সের কারণে। এই আসনে ভেদরগঞ্জের থেকে চাদপুর ফেরী ঘাট পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো বর্তমানে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে এই সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৮/২০ জন।
শরীয়তপুর থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রামের সাথে খুলনা, বেনাপোল, বরিশাল সহ দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলায় যাতায়াতের সুবিধা করতে ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয় আঞ্চলিক এই মহাসড়ক। বন্দর নগরীর সাথে দুরত্ব কমায় অল্প সময়ের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সড়কটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে শরীয়তপুর অংশের আঙ্গারিয়া থেকে আলুরবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত এই সড়কটি নির্মান করা হয়। নির্মাণের এক বছরের মাথায়ই রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরে। বর্তমানে সড়কটিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই পুকুর, খাল ও ডোবায় পড়ে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস সহ পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়া সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।
শরীয়তপুর-৩ (ভেদরগঞ্জ-ডামুড্যা-গোসাইরহাট)
এ আসনে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক। আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাকের বড় ছেলে নাহিম রাজ্জাক। তাঁর নির্বাচনী এলাকা কতটা উন্নত তা পত্র পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করলেই বোঝা যায়। যে কোন জেলার উন্নতির প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে ওই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সে দিক থেকে হিসেব করলে শরীয়তপুরের বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই বেহাল দশায়। বছর দেড়েক আগ থেকে সারা জেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলো খারাপ হতে থাকে বর্তমানে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে জেলার রাজনীতিবিদরা এবং সুশীল সমাজের নেতাদের কখনও রাজপথে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। এমনকি কোন সামাজিক ও রাজনৈতির সংগঠন কোন মন্ত্রী বা এমপির পদত্যাগের দাবি পযর্ন্ত করেননি।
বাংলাদেশর রাজনীতিতে কোন এমপি মন্ত্রী নিজের ব্যর্থতার কথা শিকার করে পদত্যাগ করার কোন নজির নেই। শরীয়তপুর তার বিপরীত হবে কেন? বর্তমানে শরীয়তপুরের যোগাযোগ ব্যাবস্থার এতটাই বেহাল অবস্থা যে তার পরেও এমপি মহোদয়রা জনগণের তোপের মুখে পড়েননি।
সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের অনেকেই বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে কর্ণেল শওকত আলী এমপি ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচিত হয়। এতো বড় পদে থাকার পরেও তিনি সখিপুর এলাকার উন্নয়ন মূলক কোন কাজ করেনি। তিনি ইচ্ছে করলে সখিপুর তথা চরাঞ্চলকে স্বর্ণ দিয়ে বাঁধতে পারতেন। এমপির খামখেয়ালী আর অবহেলার কারেন সখিপুর থানার প্রতিটি রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ। সড়ক মেরামতের দ্রুত উদ্যোগ না নেয়া হলে যে কোন সময়েই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই রুটের যান চলাচল।
নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দারা বলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার শাজনপুর সদরের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন শরীয়তপুর চাঁদপুর রোডটি এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, ভারী যানবাহনের চাপে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষয় ক্ষতির আশংকা রয়েছে, তাছাড়া শাজনপুর বাজার এলাকা হতে উপজেলার অন্যান্য এলাকায় পুরোপুরি যানবাহনের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, তাই কর্তৃপক্ষের যত শিগগিরই সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
চরভাগা ইউনিয়ন পরিষদের জনসাধারণের ভাষ্য, ১৯৯৬-২০০১ সালের এই সময়টাতে চরভাগায় যত উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে সবটাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের সহযোগিতায় মাধ্যমে হয়েছিলো। কিন্তু কর্ণেল অব. শওকত আলী এমপি ডেপুটি স্পিকার থাকা অবস্থায়ও চরভাগায় কোন উন্নয়ন মূলক কাজ করেনি। চরভাগার বর্তমান রাস্তাঘাট আর আগের অবকাঠামো দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মনে হবে সবটাই কল্পনা।
শরীয়তপুর জেলা যুব লীগের অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারাদেশে উন্নয়নের ছোয়ায় আলোকিত হলেও শরীয়তপুরবাসী সেই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শরীয়তপুর জেলার প্রতিটি রাস্তার যে বেহাল দশা তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। পত্র পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়া দেখলেই বোঝা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় শরীয়তপুরবাসী কতোটা সুখে আছে? এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুরের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের তিন তরুণ প্রার্থী জয়ী হওয়ায় এলাকার জনসাধারণের মধ্যে বাড়তি প্রত্যাশা তৈরী হয়েছে। তাছাড়া শরীয়তপুরের তিনটি আসনে বিজয়ী তিন তরুণ প্রার্থীর প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই প্রিয় ও আস্থাভাজন। তাই শরীয়তপুরের উন্নয়নে এই তিন তরুণ একযোগে কাজ করলে এই জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন জেলাবাসী। তিনটি আসনে শরীয়তপুরের বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র হিসেবে ২০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন সংসদ সদস্য পদে নতুন মুখ। তারা হলেন শরীয়তপুর ১ আসনে আওয়ামী লীগের ইকবাল হোসেন অপু আর ২ আসনে আওয়ামী লীগের এনামুল হক শামীম। শরীয়তপুর ১ সদর ও জাজিরা আসনে বর্তমান সাংসদ বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি এবার নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন।
বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শেখ হাসিনার। তাই আমাদের মতো নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এখন সেই স্বপ্ন পূরণ করব।’ শরীয়তপুর ২ নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের সখীপুর থানা আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন শওকত আলী। অসুস্থ থাকায় তিনি মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম।
নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এনামুল হক শামীম বলেন, বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশ নতুন প্রজন্মের ভোটার। তারা আমাকে নির্বাচিত করেছে। এবার নতুন প্রজন্মের জন্য সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত শরীয়তপুর গড়বো। শরীয়তপুর ৩ ডামুড্যা গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জের একাংশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবারো জয়ী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ নাহিম রাজ্জাক। তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর তিনি প্রথমে উপনির্বাচন ও পরে ২০১৪ সালে সাংসদ হন। তাই নাহিম রাজ্জাকের প্রতি শরীয়তপুরবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাবার মত তিনিও শরীয়তপুরের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছেন এবং এই যাত্রায় আবারো নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তাই এখন জনগণের প্রতি তার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো। আগামী দিনে শরীয়তপুরের উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা রাখবেন নাহিম রাজ্জাক এমনটাই প্রত্যাশা করেন শরীয়তপুর জেলাবাসী।
আর অন্যদিকে দুই তরুণ এনামুল হক শামীম এবং ইকবাল হোসেন অপু প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারাও নাহিম রাজ্জাকের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তিন তরুণ মিলে শরীয়তপুরকে উন্নয়নের মডেল জেলায় রুপান্তরিত করবেন এমনটাই স্বপ্ন এখন শরীয়তপুরবাসীর চোখে মুখে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)