যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সই করা ‘কঠোর অভিবাসন নীতি’র নির্বাহী আদেশ জারির পর সিরিয়া থেকে শরণার্থী অনুপ্রবেশ পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে শরণার্থী নথিকরণ কার্যক্রম ১২০ দিনের জন্যও প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেও দেশীয় ইস্যুতে প্রায়ই চুপ থাকার বদনাম থাকলেও এবার ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে মুখ খুললেন জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। কারণ তার নিজের পরিবারেরই অনেকে অভিবাসী। এমনকি তার স্ত্রী প্রিসিলাও।
ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন মার্ক। তিনি বলেন, “আমার দাদা-নানাদের বাবা-মা এসেছিলেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ড থেকে। প্রিসিলার বাবামায়েরাও চীন ও ভিয়েতনাম থেকে আসা শরণার্থী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ, এবং আমাদের উচিত এ নিয়ে গর্ব করা।”
অন্য অনেকের মতো মার্কও ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত বলে ওই স্ট্যাটাসে জানান তিনি। “আমাদের এই দেশটাকে নিরাপদ রাখতে হবে। কিন্তু সেজন্য আসলেই নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি, এমন মানুষগুলোর দিকে আমাদের নজর দেয়া দরকার। প্রকৃত ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের রেখে অন্যদের দিকে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারীদের মনোযোগ বাড়ানো হলে আমেরিকার সবাই-ই লোকবল ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ার কারণে আরও কম নিরাপদ হয়ে যাবে। অন্যদিকে নথিবিহীন যে মানুষেরা কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তারা বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে দিন কাটাবেন।”
শরণার্থী এবং সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরজা খোলা থাকা উচিত বলে মনে করেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা। বলেন, “এটাই আমাদের পরিচয়। আমরা যদি আজ থেকে বহু বছর আগে শরণার্থীদের দেশ থেকে ফিরিয়ে দিতাম, প্রিসিলার পরিবার আজ এখানে থাকত না।”
তবে ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় গিয়েছে এমন অভিবাসীদের (ড্রিমার) সুবিধার্থে ট্রাম্পের ‘কিছু একটা করা’র ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। জানান, বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে ৭ লাখ ড্রিমার ‘ডিফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস’ (ডাকা) প্রকল্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস এবং কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এদের এই সুরক্ষার জায়গাটি এভাবেই থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
“দেশে আসা অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষদের কাজে লাগানো” চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ট্রাম্পের বক্তব্যে আনন্দ প্রকাশ করেন মার্ক। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মার্ক জানান, বেশ কিছু সময় আগে একটি মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাস নেয়ার সময় তার সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীদের কয়েকজন ছিলো নথিবিহীন অভিবাসী। “তারাও আমাদের ভবিষ্যৎ,” বলেন তিনি, “আমরা অভিবাসী নির্মিত রাষ্ট্র, এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে যখন সেরা এবং সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলো এখানে এসে থাকতে, কাজ করতে ও ভূমিকা রাখতে পারে, তখনই আমরা তাদের কাছ থেকে সুবিধা পাই।”
“আশা করি সবাইকে একত্র করে পৃথিবীকে সবার জন্য একটি সুন্দর আবাসে পরিণত করার মতো সাহস ও সমমর্মিতামূলক মানসিকতা আমরা পাবো,” বলেন মার্ক।