স্মার্টফোন হারানোর পরে সাংবাদিকদের তল্লাশি করার প্রেক্ষিতে শমী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছেন স্টুডেন্ট জার্নাল বিডির সম্পাদক মিঞা মো. নুজহাতুল হাসান।
সাংবাদিকদের সাথে শমী কায়সারের আচরণ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে অনলাইন-অফলাইনে নানা আলোচনা-সমালোচনার পরে এই মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটলো। মঙ্গলবার সকালে অতিরিক্ত ঢাকা মহানগর আদালতে শমী কায়সারের বিরুদ্ধে মামলা করেন নুজহাতুল হাসান।
প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দিন নুজহাতুল হাসান নিজেও ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং এ কারণে বিষয়টি তাকে একটু বেশিই ব্যথিত করেছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, আজকে সকালে তিন নাম্বার কোর্টে আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের বেঞ্চে শমী কায়সারের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছি। কোর্ট আমার জবানবন্দি নিয়েছে। এই মুহূর্তে কোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি।
১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানি মামলা সর্ম্পকে নুজহাতুল বলেন, টাকা পয়সা দিয়েতো আর মান সম্মানের বিচার চলে না। মান সম্মান কি আর টাকা পয়সা দিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব! তারপরও একশো কোটি টাকার কথা আমি মামলায় উল্লেখ করে দিয়েছি।
শমী কায়সারের বিরুদ্ধে মামলা করার বেশকিছু যুক্তি দেখিয়ে নুজহাতুল হাসান বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি শমী কায়সারের আপত্তিকর আচরণ ও বক্তব্যের প্রতিবাদ স্বরূপ মানহানি মামলাটি করেছি। যেহেতু আমি নিজেও সাংবাদিকতা করি এবং সেদিন আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তাই সাংবাদিকদের পক্ষে শমী কায়সারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছি। সমস্ত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এটি আমার প্রতিবাদ। সাংবাদিকদের যে সুনাম রয়েছে, তা যেন কেউ চাইলেই বিনষ্ট করার দুঃসাহস না দেখান সে কারণেই আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে মামলাটি করেছি।
সাংবাদিকদের সাথে শমী কায়সারের এমন দুর্ব্যবহারের পর বেশকিছু সাংবাদিক সংগঠন শমীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিলো। মামলা করার আগে তাদের সাথে কোনো পরামর্শ হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে নুজহাতুল বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের সাথে আমার কথা হয়নি। কিন্তু আমার পরিচিত সার্কেল ও আমি যাদের অভিভাক হিসেবে জানি, তাদের সাথে মামলা করার আগে পরামর্শ করেছি।
২৪ এপ্রিল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্সভিত্তিক একটি পর্যটন সাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন শমী কায়সার। বর্তমানে তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই- ক্যাব) সভাপতি এবং এফবিসিসিআই পরিচালক। সেখানে বক্তব্য শেষে কেক কাটার সময় তার দুটি স্মার্টফোন গায়েব হয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ শমী মিলনায়তনের মূল দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রায় অর্ধশত সাংবাদিককে তল্লাশীও করতে বলা হয়। এমন ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিকরা হতবাক হয়ে যান। শুধু তাই নয়, সেসময় শমীর নিরাপত্তারক্ষীরা একাধিক সাংবাদিকের ব্যাগ তল্লাশি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, যে প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে শমী সেখানে গিয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীদের একজন ফোন দুটি চুরি করেছে।
এমন ঘটনার পর শমী কায়সারকে সাংবাদিকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামসহ প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামসহ সাংবাদিকদের বেশকিছু সংগঠন।