আফ্রিকান রিফিউজি এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদের অপহরণ করে লিবিয়ার আধুনিক দাস বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইএমও)। তবে বিক্রির আগে তাদের উপর নানাভাবে অত্যাচার, যৌন নির্যাতন, এমনকি মুক্তিপন না পেলে মেরে ফেলা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা(আইএমও) মঙ্গলবার জানায় তারা বেশ কয়েকজন পশ্চিম আফ্রিকান শরনার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন তারা জানিয়েছে, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাবহায় অপহরণকৃত শরণার্থীদের নিয়ে এসে গ্যারেজ এবং পার্কিং করার স্থানে বিক্রি করা হয়।
লিবিয়ায় আইএমওর প্রধান ওসমান বেলবেইসি বলেন, গড়ে প্রতি মানুষ ২০০ থেকে ৫০০ ডলারে বিক্রি করা হয়, দুই থেকে তিন মাসের জন্য।
তিনি আরও বলেন, দাস বাজারে শরনার্থীদের পন্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। সেখানকার চোরাচালানীদের কাছে এটা সাধারণ ঘটনা বলে বিবেচিত এবং দিন দিন এই চোরাচালানীদের সংগঠন শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তবে বন্দী এই সব রিফিউজি এবং অভিবাসীদের বেশির ভাগই নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং গাম্বিয়ায় লোক, যারা নৌকায় করে ইটালি যাওয়ার চেষ্টার সময় উত্তর দিকে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
বন্দীদের বেশির ভাগই কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, বা কৃষি কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কাউকে কাউকে মজুরি দেওয়া হলেও বেশির ভাগকেই বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও নারীদের দিয়ে নিম্নমানের কাজ করানো হয় বলেও শোনা গেছে, এমনকি তাদেরকে ধর্ষণ এবং পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় বলে জানান বেলবেইসি।
লিবিয়ার সাবহায় আরো ১০০ জনের সঙ্গে বন্দী ছিলেন এমন এক সেনেগালি অভিবাসীর সঙ্গে আইএমও কথা হয়েছে। সে জানায়, বন্দীদের পরিবারকে টাকা পাঠানোর জন্য তাদের উপর চাপ দেওয়া হতো, কখনো কখনো অত্যাচারও করা হতো। পরে আরেক লিবিয় তাকে ক্রয় করে তার নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।
তবে যারা মুক্তিপণ দিতে রাজী না হয় তাদের মেরে ফেলা বা মরার জন্য না খাইয়ে রাখা হয়। যখন কেউ মারা যায় বা মুক্তি পায় তখন তার স্থলে অন্যদের নতুন করে আনা হয় বলে জানিয়েছে আইএমও।
তারা আরও জানায় যারা মারা যায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত না করেই কবর দেওয়া হয়।কিন্তু তার পরিবার তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে,তার ভাগ্যে কি হলো তা জানতেও পারেনা।
আইএমও জরুরি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আব্দিক বলেন, অপহরণকারীদের হাতে আটকদের না খাইয়ে পুষ্টিহীন করা হয়, যৌন নির্যাতন করা, এমনকি খুনও করা হয়।
গত বছর এক মাসেই ১৪জন শরনার্থী মারা গেছেন রোগে ও অপুষ্টিতে বলে জানা গেছে। আইএমও আরও জানায়, মরুভূমিতে অনেক গণকবর রয়েছে বলেও আমরা শুনেছি।
সমুদ্র পথে ইউরোপে যাওয়ার প্রধান পথ হচ্ছে লিবিয়া। তাই গত তিন বছরে কমপক্ষে ১৫০,০০০ জন মানুষ এই পথে ইউরোপে পাড়ি দিয়েছে। এই বছরে এপর্যন্ত ২৬,৮৮৬জন সীমানা পাড়ি দিয়ে ইটালি গেছে। যা ২০১৬ সালের এই সময়ের চেয়ে ৭০০০ জন বেশি। যার মধ্যে ৬০০বেশি মারা গেছে সমুদ্রে, আর কতজন মরুভূমি দিয়ে উত্তরের দিকে যাওয়ার সময় মারা গেছে তার হিসাব নেই।