কুয়াশা কেটে গিয়ে যেমন আলো ফুটে ওঠে ঠিক তেমনি ধোঁয়াশা কেটে কি সত্য প্রকাশ পাচ্ছে? লক্ষ মানুষের বিমূর্ত শঙ্কার জায়গাটা আবার যেন মূর্ত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে নতুন করে এ কোন কাল মেঘের আনাগোনা! ১৯৭১-১৯৭৫ সালের মতো আবার শুরু হলো কি সেই অপশক্তির সদম্ভ পদচারণা!
বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজে জানা যায় যে, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সরকারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের ৭ জন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে অন্তত একজন আওয়ামীলীগ এমপি (গোলাম কিবরিয়াকে) ঈদের নামাজরত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়। যেখানে পরবর্তীতে বাকশালের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আলোকে নির্বাচন পরিচালনা করা হয় যেখানে ভালো মানুূষকে নির্বাচিত করার জন্য নির্বাচনী সব খরচ বহন করে রাষ্ট্র। যা ছিল ভালো লোকের রাজনীতিতে আসার একটা সুযোগ তৈরি করা। তখন যারা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যায় অভিযুক্ত ছিলেন তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়।
শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরে তার ঘনিষ্ঠ কুষ্টিয়ার কাজী আরেফ আহাম্মেদ হত্যা পরিকল্পনার কথা আগেই ফাঁস হয়ে গেলেও সরকার ঘনিষ্ঠ (!) কুচক্রীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে চুপ থাকতে বলেন। তাই যা হবার তাই হয়। সন্ত্রাসীরা নিরাপদেই কাজী আরেফ আহাম্মেদকে হত্যা করে পার পেয়ে যায়। কারণ সেদিন কাজী আরেফ আহাম্মেদের পূর্ব ঘোষিত জনসভায় যে সময়ে পুলিশ আসার কথা ছিলো সে সময় পুলিশ আসেনি, এসেছে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরে। অন্যদিকে সেই হত্যা মামলার সন্দেহভাজন যারা আগে থেকেই পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী হিসেবে নথিভূক্ত তারাও এখন আওয়ামী লীগ করে, নেতাও হয়েছে, পেয়েছে পদ।
আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন, সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় আহসান উল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকেও হত্যা করা হয়। কাজেই ষড়ন্ত্রকারীদের এ ধরনের চক্রান্ত নতুন কিছু নয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর বাসায় ঢুকে সন্ত্রাসীরা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করে। হত্যার রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি। তবে ঘটনার দিন তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে কোনো পুলিশ না থাকায় নানা প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি জেনে বুঝেই খুনিরা ঘটনাস্থলে চলে আসে। এর আগেও এমপি লিটনকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সর্বশেষ নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলি চালালে এক শিশু আহত হয়। তার পরে তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্রটি জব্দ করা হয়।
বিশেষ গোষ্ঠীর প্রভাবে পত্রিকায় খন্ডিত রিপোর্ট ছাপা হয়, সত্য গোপন করেই চাপে ফেলে তাঁকে নিরস্ত্র করা হয়। বিশেষ আকর্ষণে এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী শুরু করে লিটনের চরিত্র হরণ! কারণ কী এই যে লিটন তাঁর এলাকায় গোলাম আযমকে ঢুকতে দেন নি! নাকি অন্য কিছু আছে এর পিছনে!
গতকাল মন্ত্রীসভার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ও আপিল বিভাগের বিচারপতি বজলুর রহমানের মৃত্যুতে দুটি পৃথক শোক প্রস্তাব তোলা হয়। এ সময় আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী লিটনের প্রশংসা করে বলেন, লিটনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্যই শিশুর পায়ে গুলি করার ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। আসল ঘটনাটি হলো, ওই শিশুকে সে গুলি করেনি। ওই শিশুর শরীরে গুলি লাগার আগে লিটনের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। হামলা থেকে বাঁচার জন্য লিটন গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে গিয়ে এটি ওখানে থাকা শিশুটির শরীরে লাগে। আর আমাদের মিডিয়া পুরো ঘটনা প্রচার করেনি। সেটি প্রকাশ না করে শিশুর পায়ের গুলির ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয়। ফলে তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, এর ফলে এটি প্রমাণ হয়, লিটনের ওপর ঘটনা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২৩ আগস্টের ২০১৬ তারিখের এক খবরে বলা হয়,‘ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ ডন ইয়াসিন খান ওরফে পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ কারাগারে বন্দী ১৪ বছর ধরে। নজিরবিহীন ঘটনা হলো, কারাবন্দী এই ডন এই সময়ের মধ্যে বাবা হয়েছেন। চার বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে তার। তেজগাঁওয়ের আরেক ডন সেলিম ওরফে রায়পুইরা সেইল্লা। কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনিও হয়েছেন কন্যাসন্তানের জনক। কাইল্যা পলাশ বা রায়পুইরা সেইল্লাই শুধু নন, এমন বন্দীজীবনে থেকে সন্তানের জনক হয়েছেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরও বেশ কয়েক ডন। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন অন্তত পাঁচজনের বাবা হওয়ার তথ্য। বাবা হননি, কিন্তু স্ত্রী বা বান্ধবীর সঙ্গে একান্ত সময় কাটিয়েছেন, এমন সংখ্যা অগণিত। একমাত্র কাইল্যা পলাশই পুলিশ পাহারায় নিজ বাসায় গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। বাকিরা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সুযোগ পেতেন। কোর্ট গার্ডদের বিশেষ কক্ষে মিলিত হতেন তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে। ওই কক্ষটিকে সন্ত্রাসীরা ‘ফ্রি পোর্ট’ নামকরণ করেছিলেন। তবে এই ‘ফ্রি পোর্ট’ ব্যবহারে সন্ত্রাসীরা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতেন’।
উপরের সবগুলো ঘটনাতেই দেখা যায় যে, সন্ত্রাসীরা এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ পুলিশকে ম্যানেজ করে এইসব অপরাধ করছে। তাহলে পুলিশ বাহিনীর সদস্য এরা কারা! যারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে সরকারের মধ্যে থেকেই!এরা কি তাঁরা যারা বিভিন্ন হাইব্রিড আওয়ামী লীগ ও অর্থলোভী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশেষ বস্তু দিয়ে ম্যানেজ করে চাকরী নিয়ে চলেছে অবিরাম! এরা কি তাঁরা যারা চায় পুলিশ বাহিনীর সাথে সরকারের একটা দূরত্ব তৈরী হোক? যাতে আন্দোলনের নামে দেশে অরাজগতা সৃষ্টি করতে চায়।
অনেকেই বলেন, করল্লা ক্ষেতে আম ফলবে না। যারা রক্তে, বংশ পরম্পরায় মুসলিম লীগ, রাজাকার; যাদের রক্তে পাকিস্তানি রক্ত প্রবাহিত, যারা বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগকে বছরের পর বছর ধরে গালি দিয়েছে তাঁরা এখন শুধু সুযোগের জন্য আওয়ামী লীগের সাইন বোর্ড ব্যবহার করছে। তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও আছে লুটপাট আর চুরি করে গড়ে তোলা অর্থনৈতিক ক্ষমতা, শক্তি। আছে কালো টাকায় গড়ে তোলা মিডিয়ার বিশাল শক্তি। আছে আওয়ামীলীগ থেকে সুবিধা বঞ্চিত বা বিতাড়িত হয়ে রাতারাতি হয়ে ওঠা ভাড়াখাটা বুদ্ধিজীবী। অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে ১৯৭১ সালের পরাজিত নেংটি ইঁদুরেরা দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে করছে ষড়যন্ত্র। নিজেদের চ্যালা চামুন্ডাদের ভেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগে, যাতে সুযোগ বুঝে কাজে লাগানো যায়। যাতে তাদের কাজী আরেফ, আহসানুল্লাহ মাস্টার, এএমএস কিবরিয়া, লিটনকে হত্যায় কাজে লাগানো যায়। দেশে ১৯৭৪ সালের মতো অস্থিরতা তৈরী করা যায়।
অভিজ্ঞতা বলে, যে পুরুষ একবার বহুগামী হয়, তার টাকা বা তাগদ ফুরালেই ভালোমানুষ সাজে টাকা বা তাগদ অর্জনের সুযোগের জন্য। কসম করে বলে আর সে বহুগামী হবে না। কিন্তু টাকা আর তাগদ ফিরে পেলেই আবার সে তার আসল রূপে ফিরে যায়, যা তাঁর রক্তে মিশে আছে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মৌসুমি কোকিলেরা গান গায়, সুযোগ পেলেই কাকের বাসায় ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে নেয়। তাই মৌসুমি কোকিলের গান শুনে বিমোহিত হলেই সর্বনাশ। একের পরে এক এমপি লিটনেরা ঝরে যাবেন। ব্যহত হবে উন্নয়নের বর্তমান ঈর্ষনীয় অগ্রযাত্রা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)