চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

লিঙ্গ বৈষম্য: পদার্থবিদের বিরুদ্ধে আড়াইশ’ বিজ্ঞানীর সই

পদার্থবিদ্যা ‘পুরুষের তৈরি’ – এমন লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ইটালির এক গবেষকের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই করেছেন আড়াইশ’র বেশি বিজ্ঞানী।

অধ্যাপক আলেসান্দ্রো স্ত্রুমিয়া গত সপ্তাহে একটি কর্মশালায় নিজের করা একটি বিশ্লেষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

তার দাবি, ওই বিশ্লেষণই প্রমাণ করে, পদার্থবিজ্ঞানে নারীরা পুরুষের চেয়ে কম যোগ্য। অথচ ওই সেমিনারে উপস্থিত অধিকাংশই ছিলেন তরুণ নারী পদার্থবিজ্ঞানী।

ইটালির পিসা ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন) কার্যালয়ে আয়োজিত ওই কর্মশালায় অনেকগুলো গ্রাফ দেখিয়ে দাবি করেন, পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষের আগে চাকরি দেয়া হয়। যদিও সেই পুরুষের গবেষণাপত্র বিভিন্ন প্রকাশনায় সেই নারীর গবেষণার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, নারী ও পুরুষ পদার্থবিদরা তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে সমানভাবেই গবেষণার সাইটেশন পান। কিন্তু পরে সময়ের সাথে সাথে পুরুষ গবেষকরা নারীদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে সফল হন।

একে স্ত্রুমিয়া পুরুষের মেধার মান নারীর চেয়ে উচ্চতর হওয়ার প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, এরপরও নারীদের পুরুষের চেয়ে বেশি সুযোগ ‍দিয়ে পুরুষদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, নিজের চালানো একটি আচরণভিত্তিক গবেষণার সূত্র ধরে তিনি মন্তব্য করেন, পুরুষ এবং নারীর মস্তিষ্ক একই রকম – এই কথাটি আসলে একটা কাল্পনিক যুক্তি।

অথচ ওই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল পার্টিক্যাল ফিজিসিস্ট হতে আগ্রহী নারী পদার্থবিদদের দিক নির্দেশনা দেয়া।

প্রফেসর স্ত্রুমিয়ার দাবি, তার বক্তব্য প্রমাণ করছে নারীদের প্রতি আসলে কোনো বৈষম্য নেই। কিন্তু তার বক্তব্যেই নারীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ছিল। এ কারণে তার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ন তার ল্যাবের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে স্ত্রমিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করেছে। বলেছে, স্ত্রুমিয়ার বক্তব্য আক্রমণাত্মক এবং তা সার্নের নীতিমালাবিরোধী।

বিজ্ঞানীদের প্রতিবাদ এবং বিবৃতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে সার্ন।

ওই লিখিত বিবৃতিতে এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা সই করছেন। www.particlesforjustice.org ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই অনলাইন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রফেসর স্ত্রুমিয়ার কথাবার্তা ‘মৌলিকভাবেই ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল। সেখানে তিনি খোলাখুলিভাবে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকাশ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেককে আক্রমণও করেছেন।

এর জবাবে অবশ্য বিষয়টিকে উড়িয়েই দিয়েছেন স্ত্রুমিয়া। বলেছেন, এ পর্যন্ত যে সংখ্যক পদার্থবিজ্ঞানী তার বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই করেছেন, পদার্থবিদ সম্প্রদায় এর চেয়ে আসলে শতগুণ বড়।

বিবিসি’কে তিনি বলেন, সইকারীরা মূলত রাজনৈতিক শুদ্ধতার চেষ্টায় প্রভাবিত দেশগুলো থেকে এসেছেন। ‘এটাকে আমি গবেষণায় বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেছি। এর ধারাবাহিকতায়ই আসলে শিক্ষাবিদরা অন্য সেসব শিক্ষাবিদদের চাকরিচ্যুত করতে চান যাদের চিন্তাধারা তাদের কাছে ‘নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’।’

মাত্র ক’দিন আগেই পদার্থবিজ্ঞানে এ বছরের নোবেলজয়ী গবেষকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নোবেলজয়ীদের একজন নারী। লেজার পদার্থবিদ্যায় যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেলের মতো সম্মাননা পেয়েছেন ডনা স্ট্রিকল্যান্ড