ঢাকার পুরনো মসজিদগুলোর মধ্যে লালবাগ শাহী মসজিদকে সবচেয়ে বড় মসজিদ মনে করেন অনেকে। নির্মাণের পর থেকে বহুবার সংস্কারে এর কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। সুউচ্চ মিনার বিশিষ্ট তিন তলা এ মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় আট হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন বলে জানালেন মসজিদের একজন খাদেম।
মসজিদটি ঢাকার লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি নির্মাণ করা হয় ১৭০৩ সালে। তৎকালীন ঢাকার উপ-শাসক সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র ফররুখশিয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদেরর প্রবেশপথের ডিজিটাল বোর্ডেও নির্মাণ সাল প্রদর্শন করা হয় এখন।
তবে বহুবার সংস্কারের ফলে একমাত্র কেল্লার ভেতরের দিকের প্রবেশপথ ছাড়া আর কিছু দেখে অনুমান করার উপায় নেই যে এটি এত পুরনো মসজিদ। এর প্রায় প্রতিটি অংশই সংস্কার করা হয়েছে। এতবার সংস্কারের ফলেই হয়তো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করেনি। তাছাড়া বাংলাপিডিয়া বা ঢাকার ইতিহাস ভিত্তিক বইগুলোতেও এ মসজিদ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য নেই।
সরেজমিনে মসজিদটি ঘুরে দেখা যায়, উঁচু প্লাটফর্মের ওপরে নির্মিত মসজিদটি এখন তিন তলা বিশিষ্ট। মসজিদের প্রবেশ পথের পাশেই রয়েছে একটি ছোট কবরস্থান। ভেতরের ঢুকলেই চোখে পড়বে এক বিশাল ওযুখানা। এক সঙ্গে অনেক মুসল্লী ওযু করতে পারেন এখানে। ভেতরের দেয়াল, মেঝে থেকে শুরু করে সব জায়গায় আধুনিক নির্মান সামগ্রীর ছোঁয়া। পুরনো আমলের কিছু এখানে চোখে পড়ে না। মসজিদের একাধিক কক্ষে বিভক্ত মসজিদটির পাশেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা। তবে মাদ্রাসাটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বিশাল এ মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে কমিটির মাধ্যমে। মসজিদটির সংস্কার, পরিবর্ধন-পরিমার্জন, আসবাব থেকে শুরু করে সব কিছুর ব্যয়ভার কমিটির মাধ্যমেই নির্বাহ করা হয়। তবে ব্যয়ের বেশিরভাগ আসে মসজিদ দানবাক্সে মুসল্লীদের দেওয়া টাকায়।
নামাজ পরিচালনার জন্য মোট ৪ জন ইমাম রয়েছেন। এছাড়া দুইজন মুয়াজ্জিন, ১০ জন খাদেমসহ সর্বমোট ২২ জন বেতনভুক্ত কর্মচারি রয়েছে মসজিদটিতে। মসজিদের অন্যতম খাদেম মোহাম্মদ বিশ্বাস চ্যানেল আই অনলাইনকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন: জুম্মার দিনে মসজিদের নিচতলা, দোতলা ভরে ছাদও মুসল্লীতে ভরে যায়। একসঙ্গে প্রায় ৭-৮ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারে এখানে।
লালবাগ কেল্লায় যারা ঘুরতে আসেন, তাদের অনেকেই দেখতে আসেন এ মসজিদটি। কিন্তু মসজিদটি দেখে অনুমান করা কষ্ট যে, এটি এত পুরনো মসজিদ। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত আর দশটি সাধারণ মসজিদের মতই মনে হয় এটিকে।