আমরা যে রাতকে শবে কদর বলি, কোরআনের ভাষায় তা লাইলাতুল কদর। এটি একটি অতুলনীয় রাত। মানব জাতির ইতিহাসে যত জাতি বা কওম পৃথিবীতে এসেছে, কোনো যুগেই এমন ফজিলতের রাত ছিল না, যেমনটি উম্মতে মুহাম্মদীকে দেওয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ তা’আলা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার সুবাদে অন্যান্য নবী ও রাসূলগণের উম্মত থেকে আমাদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাও কোরআনে স্বীকৃত। যেমনটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ‘অনুরূপভাবে আমি তোমাদের কে শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছি।’
শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট উম্মতে মুহাম্মদীর মাথায়। অথচ তার বিপরীতে আমরা অন্যান্য নবী-রাসূলদের উম্মতের র্দীঘ দেখতে পাই আয়ুষ্কাল। যাদের আয়ু বেশি স্বাভাবিক ভাবে তারা আমল করার সময় বেশি পাবেন এবং এই হিসেবে আমাদের আমল থেকে তাদের আমলের পরিমাণও বেশি হওয়া স্বাভাবিক। পাশাপাশি আমাদের কর্ম-ক্ষমতা থেকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের উম্মতের কর্ম-ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি। একদিনে আমরা যে আমল করি পূর্বগত অনেক উম্মত সেই তুলনা আমল করতে পারত অনেক বেশি। তাহলে সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে উম্মতে মুহাম্মদীকে কিসের ভিত্তিতে মহান আল্লাহ শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা দিলেন?
জটিল এ প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের সূরা কদর-এ। লেশহীন ভাষায়, ‘কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাস টানা ইবাদত করা থেকেও আল্লাহর কাছে আরও শ্রেষ্ঠ।’ অন্য উম্মত ৮০ বছরের টানা পরিশ্রম করে যা অর্জন করেছে, আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উসিলাই এর চেয়ে আরও বেশি বড় পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে। আসলে দাতা যখন মহান ¯স্রষ্ঠা, তখন তিনি কাকে কী দেবেন, কতটুকু দেবেন, কী শ্রমের বিনিময়ে কী পুরষ্কার দেবেন তা তিনিই জানেন এবং নির্ধারণ করেন। তিনি চাইলে ছোট কাজের বড় প্রতিদান দিতে পারেন। আবার হাজার বছরের পরিশ্রমকে মূল্যহীন করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন। এজন্য কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না তাকে। তিনি স্বাধীন ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। শেষ নবীকে ভালোবেসে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিলেন তিনি। আবার শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মতকে যদি শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেওয়া না হয় তবে আবার ওই নবীর যথাযথ সম্মান হয় না। সে কারণে আয়ুষ্কাল কম হলে তাদের সময়ের মূল্য বাড়িয়ে স্বল্প পরিশ্রমের বিনিময়ে অঢেল প্রতিদান দিয়ে শ্রেষ্ঠ নবীর ক্ষণজন্মা উম্মতকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। এটা আল্লাহর অপার মহিমা। সে জন্য আমাদের উচিত হবে মহিমান্বিত এ রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে উদযাপন করা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ঈমানের সাথে ও ছাওয়াবের নিয়তে যে ব্যক্তি কদরের রাত্রিতে ইবাদত করবে তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।