চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

লতার মৃত্যুতে মোদির টুইট, ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর মারা গেছেন। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের তরফ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুই দিন ভারতের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লিখেছেন, ‘আমি আমার ব্যথার কথা বলে প্রকাশ করতে পারব না। দয়ালু এবং যত্নশীল লতা দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিনি আমাদের দেশে একটি শূন্যতা রেখে গেলেন যা পূরণ করা যাবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে ভারতীয় সংস্কৃতির একজন অকুতোভয় হিসেবে মনে রাখবে। তার সুরেলা কণ্ঠে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার এক অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘আমি লতা দিদির কাছ থেকে সবসময় স্নেহ পেয়ে এসেছি। এটাকে আমি আমার সম্মান বলে মনে করি। তার সাথে আমার আলাপচারিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লতা দিদির প্রয়াণে আমি ও আমার নাগরিকরা শোকাহত। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সমবেদনা জানিয়েছি।’

লতা মঙ্গেশকর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সম্প্রতি অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার আচমকা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রবিবার সকাল ৮.১২ মিনিটে প্রয়াত হন লতা মঙ্গেশকর।

কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি তাকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন শিল্পী। প্রথম থেকেই তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়তে পারলেন না তিনি।

তার দেহ শিবাজি পার্কে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে লতা মঙ্গেশকরকে।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোরে শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব ও থিয়েটার শিল্পী পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ও শেবান্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন লতা। তার বাবা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর মরাঠি ও কোঙ্কিণী সংগীত শিল্পী ছিলেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে অভিনেত্রী হিসাবে কাজ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বাবাকে হারানো লতা, পাঁচ ভাই-বোনের কথা ভেবে ওই বয়সেই হাল ধরেন সংসারের। ১৯৪২ সালে একটি মারাঠি ছবির সৌজন্যে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি।

পরের বছর মারাঠি ছবি ‘গাজাভাউ’-এর জন্য ‘মাতা এক সুপুত কি দুনিয়া বদল দে তু’ গানটি রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর, এটি ছিল তার প্রথম হিন্দি গান। এরপর লতার মুম্বাইয়ে আসা, এবং ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী গানের তালিম পর্ব শুরু। এরপর ধীরে ধীরে বলিউডে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর।

লতা মঙ্গেশকর তার সাত দশক দীর্ঘ কেরিয়ারে এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবির গান রেকর্ড করেছেন এবং গান গেয়েছেন ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষায়। অনিল বিশ্বাস, এসডি বর্মণ, সলিল চৌধুরীর মতো সংগীত পরিচালকদের পছন্দের গায়িকা ছিলেন লতা।

নতুন শতাব্দীতে গানের জগত থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন লতা, তবুও ‘বীর জারা’, ‘রং দে বাসন্তী’র মতো ছবিতে আছে তার সুমধুর কণ্ঠ। ২০১৯ সালে ভারতীয় আর্মিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন লতা, রেকর্ড করেন ‘তেরি মিট্টি কি সৌগন্ধ’। এটিই লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ড করা শেষ গান।