‘‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, র্যাগের প্রভাব যেন আর কোন মা-বাবার উপর না পড়ে। আমি নিজের মর্যাদাহানি করতে পারবো, কিন্তু আমার মা-বাবাকে অপমানিত হতে দিব না। তাই আমার স্বপ্নকে ছাড়তে রাজি হলাম। বিদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।’’.. ফেসবুকে এরকম স্ট্যাটাস দিয়ে র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে ওই বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে রসিকতার নামে র্যাগিং নাম দিয়ে নানারকম শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের খবর পাওয়া যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও খ্যাতনামা সরকারি কলেজগুলোতে। প্রচলিত তথ্যমতে গ্রিক কালচার অনুসারে সপ্তম ও অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য এই প্রথা ছিল। নতুন আর পুরাতনের মধ্যে সর্ম্পক সহজ করতে এই ধারা। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা ঢুকে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মিলিটারিতেও এ ধারা ব্যাপক। বাংলাদেশেও বহুবছর ধরেই এই র্যাগিং নামধারী উৎপাত ও নিপীড়ন প্রচলিত। র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস পরিবর্তন, আত্মহত্যার চেষ্টা ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন বলে অনেক ঘটনা রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই র্যাগিং বন্ধে প্রশাসনিক সতর্কতা ও বিভিন্ন ঘটনায় শাস্তি দেবার নজির থাকলেও কোনো নির্দিষ্ট আইন না থাকায় তা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। জাতিগতভাবে বাঙালির রয়েছে অতিথি পরায়ন হিসেবে সুনাম আর নতুনকে দ্রুত বরণ করে নিতেও আমাদের রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। তারপরেও কেন র্যাগিং নামের এই অসভ্য পশ্চিমা কালচারে আক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? তা চিন্তা করার সময় এসেছে। সিনিয়র হওয়ার সুযোগে নবীনদের উপরে এই র্যাগিং নামের অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ হওয়া সময়ের দাবি। আইন করে বন্ধ করা না গেলেও আমাদের আশাবাদ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও আদেশের মাধ্যমে তা বন্ধ হোক।