মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করবে না মালয়েশিয়া। বরং পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে স্থান দিতে প্রস্তুত তারা। মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এজেন্সি চিফ শুক্রবার এই তথ্য জানান।
মালয়েশিয়া মেরিটাইম ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল জুলকিফলি আবু বাকার বলেন, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে ভেসে এসেছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে। আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম তাদের প্রাথমিক কিছু সহায়তা দিয়ে আবার তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেব। কিন্তু দিনশেষে মনে হলো মানবিকতার খাতিরেই আমরা এমনটা করতে পারবো না।
রয়টার্সে প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায়, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে যেখানে তথ্যবিহীন বিদেশীদের রাখা হয় বলে জানান আবু বাকার।
এছাড়া এর আগে থাইল্যান্ডও জানায় তারাও মিয়ানমার থেকে যাওয়া শরণার্থীদের গ্রহণে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড বর্ডারের কাছে জঙ্গল ক্যাম্পে বেশ কিছু গণকবরের খোঁজ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের বেশিরভাগই মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতে মারা গেছে আরও শতাধিক রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।