প্রমাণ ছাড়া মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলতে নিষেধ করেছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী এবং শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি। দু’টি কারণে সু চি এমন কথা বলেছেন বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ‘চাথাম হাউজ’-এর এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জশুয়া ওয়েব।
তার মতে, হয় সু চি সেনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন না কিংবা পারছেন না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার খবর বিশ্বগণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হলেও শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি কোনো পদক্ষে না নেয়ায় হতাশ বিশ্ব। উঠেছে নিন্দার ঝড়।
সু চির এই নিরবতার পেছনের কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করতে গিয়ে জশুয়া ওয়েব ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এ লিখেছে, ‘দেশটিতে সু চির দল গত নির্বাচনে সেনা সরকার সরিয়ে গণতন্ত্র আনায় আনন্দের তলায় চাপা পড়েছে একটি চরম সত্য। এই সত্যটা হলো মিয়ানমারের মুসলিম বিদ্বেষ। রাখাইন প্রদেশে এই সাম্প্রদায়িকতাই মাথা চাড়া দিচ্ছে। সেখানে বৌদ্ধ ধর্ম কেন্দ্রীক ‘মা বা থা ’ নামের এক উগ্র জাতীয়তাবাদী তৎপরতার শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা।’
সু চি’র সরকারও এই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বলেই রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলছে। দেশটিতে তথাকথিত গণতন্ত্র আসলেও সেনা শাসনের এই শেখানো বুলি আওড়াচ্ছে সু চি’র সরকার।
নামমাত্র গণতন্ত্র আসলেও দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সু চি’র সম্পর্কটা বেশ অস্পষ্ট। ২০০৮ সালে মিয়ানমারের সংবিধানে প্রণীত বিধান অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত সম্পর্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় আছে সেনা দখলে। আর এখানেই সু চি’র সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।’
দীর্ঘদিন সেনা শাসিত দেশটিতে দুর্নীতি, সশস্ত্র সংঘাত এবং মারাত্মক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে চর্চা চলে এসেছে তা থেকে বেরিয়ে এসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত বলে মনে করেন চাথাম হাউজের এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জশুয়া।
তবে চলমান রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানকে একেবারে অযৌক্তিক হিসেবে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। কারণ দীর্ঘ দিন ধরেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়ানোর প্রবণতা আছে।
মিয়ানমার সরকারের ধারণা অক্টোবরে ৯ জন সীমান্তররক্ষীকে জঙ্গিরাই হত্যা করে। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।