রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিফল হওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের খামখেয়ালির সাথে এখন রোহিঙ্গাদের আবদারও যোগ হয়েছে। রোহিঙ্গা ঢলের ২ বছর উপলক্ষে তারা এসব আবদারের কথা জানিয়েছে। এছাড়া প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত দিনেও তারা এসব দাবি-দাওয়া পেশ করেছে। এসব অজুহাতে নির্ধারিত দিনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হয়নি।
রোহিঙ্গাদের এসব আবদারের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই তাদেরকে কেউ কেউ ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন: যেসব বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) শর্তের বাইরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য কেউ কেউ দা–কুড়াল বানাচ্ছে। যারা এটা করছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা ঢলের ২ বছর উপলক্ষে কক্সবাজারে তাদের বড় একটি সমাবেশ হওয়া প্রসঙ্গে যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন: এত বড় শোডাউন হলো, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হলো। কারও জাতীয় আইডি নাই, কিন্তু সবার হাতে সেলফোন আসল কোত্থেকে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে আমরাও প্রশ্ন করতে চাই, বায়োমেট্রিক এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন এলো কিভাবে? এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য বানানো দা-কুড়াল কারা বানালো? এ বিষয়গুলোকে আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেই মনে করি। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে শিগগিরই খুঁজে বের করতে হবে।
এই অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য সেই বিষয়েও বলেছেন। তার দাবি, এগুলো বিভিন্ন এনজিও সাপ্লাই দিয়েছে, বড় বড় বিলবোর্ড বানিয়েছে, ডিজিটাল ব্যানার দিয়েছে, লিফলেট বানিয়েছে। কেউ কেউ দা-কুড়াল বানাচ্ছে তাদের জন্য। আমরা তাদের আইডেনটিফাই করেছি, যে প্রতিষ্ঠান দা-কুড়াল বানাচ্ছে, আমরা তাদের শাস্তি দেব।
বরাবরের মতো আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি তাই এর সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া থাকলে সেগুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনে রাখাইনে নিজ ভূমিতে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গারা সেসব দাবি-দাওয়া আদায় করবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের আবদারের সুরকে মিয়ানমার যেন এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারে যে, আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চাইলেও তারা আসছে না। এখন আমরা কী করতে পারি? এজন্য জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর রোহিঙ্গাদেরও যে যেকোনো মূল্যে রাখাইনে ফিরতে হবে, এ বিষয়টাও কঠোরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এই নীতির বাইরে কোনো পক্ষ যদি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে তাদেরকেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এখনও কঠোর অবস্থান না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলেই আমাদের শঙ্কা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতা, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর উস্কানি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর ইতোমধ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে। এসব অপতৎপরতা দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।
এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে আরও বেশি গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা এবং তাদের প্রত্যাবাসনে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করতে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।