চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র: নোয়ার্ট

যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র সহায়তা প্রদানের মাধ্যমেই নয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে হাতে হাত রেখে কাজ করে যাবে। দেশটি ইতোমধ্যেই গৃহহারা রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপদে তাদের বাড়ি ফিরে যাবার বিষয়েও সব ধরনের সমর্থন জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট হিদার নোয়ার্ট বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের সহযোগিতা হচ্ছে একটি শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ফসল। আমরা এই সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।

নোয়ার্ট বলেন, এই মর্মান্তিক মানবিক সংকটের সময়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে নোয়ার্ট গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি তার এই সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষগুলোর জন্য তাদের দ্বার ও হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এজন্য আমেরিকান জনগণের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হয়েছে। তিনি অসহায় রোহিঙ্গাদের এমন দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকতে এবং সাধ্যমত সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহবান জানান।

নোয়ার্ট এর আগে চ্যান্সেরি চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।  অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেী মিশনগুলোর কূটনীতিকগণ, মার্কিন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, সিনিয়র সাংবাদিকগন, বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যোগ দেন।

নোয়ার্ট বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেছেন, বিশ্বে সবোর্চ্চ মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরবর্তী পযার্য়ে নিয়ে যেতে মাকির্ন রফতানিকারকরা সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী আঞ্চলিক জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত, সন্ত্রাসীদের দমন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের শক্তিশালী করতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মাকির্ন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশী শান্তি রক্ষীরা দেশটির জাতির পিতার সাহসী দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। তিনি বংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু যাদুঘর পরিদর্শনকালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উল্লেখ করে বলেন, এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালি-অবাঙালি-হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই ভাই ভাই। আমাদের দায়িত্ব সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নোয়ার্ট বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিমত্তা ও চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি একসঙ্গে শান্তি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। ভাষণে সকলকে ভাই ও বোন হিসেবে এবং তাদের অধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ভাষণে কোন শ্রেণী, বর্ণ, রাজনীতি অথবা জন্মস্থান গুরুত্ব পায়নি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সমর্থন মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে। বর্তমানে দুটি দেশই অভিন্ন স্বার্থ, দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলে তাকে আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং বিশেষ করে জাতির পিতার সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

অনুষ্ঠানে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের প্রবাসী শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।