মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে না করতেই ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে উখিয়া-টেকনাফে ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যানার প্রকাশ করা হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা এলাকাসমূহে এসব ডিজিটাল ব্যানারে ছেয়ে গেছে। ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে, প্রধান সড়কের পাশে এবং দর্শনীয় স্থানে লাগানো হয়েছে এ ব্যানার।
‘আমাদের ২১ দফা মানতে হবে’ শিরোনামে ২টি ছবি ও লোগো সম্বলিত প্রচারিত ব্যানারে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় ২১ দফা উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটি নামক সংগঠনের নামে এই ব্যানার প্রকাশ করা হয়।
সোমবার সকালে স্থানীয়দের নজরে পড়ে ২১ দফার এ ব্যানার। তবে কে বা কারা এই ব্যানার তৈরী বা লাগিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সাধারণত ডিজিটাল ব্যানারে প্রেসের ঠিকানা থাকে। কিন্তু এই ব্যানারে ঠিকানাও নেই। তাছাড়া দিনভর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুসন্ধান করেও কথিত রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটির খোঁজ মিলেনি।
স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা এখনও আসছে। যারা এসেছেন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সকলের এখনও মাথা গোঁজার ঠায় হয়নি। সরকারিভাবে তাদেরকে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় ২১ দফা দাবি বাস্তবায়নের ব্যানার প্রচারের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে।
২১ দফা দাবিগুলো হচ্ছে
- সকল রোহিঙ্গা জনগণকে বাধ্যতামূলক নাগরিক অধিকার দিতে হবে ও বার্মা সরকারের পক্ষ থেকে কোন শর্ত না দিয়ে আমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর যেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের সকল শিক্ষার অধিকার দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরের জমিজমা কোন শর্ত ছাড়াই কাগজে-কলমে ফেরত দিতে হবে।
- রাখাইনের পুরনো নাম আরাকান স্টেট দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকার দিতে হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মালামালের নিরাপত্তা দিতে হবে।
- আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা বিচার ব্যবস্থা করতে হবে। জজ ম্যাজিস্ট্রেট রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে জেল হাজতে বন্দি রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করছে তাদের শর্তবিহীন ছেড়ে দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা জেলখানা আরাকানের ভেতরে স্থাপন করতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা সরকারি মুসলিম মন্ত্রণালয় স্থাপন করতে হবে।
- যেকোন এনজিও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদেরকে আরাকানে প্রবেশ করার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব টিভি চ্যানেল পরিচালনায় কোন বাধা দিতে পারবে না।
- আরাকানের জমিতে অবস্থানরত বৌদ্ধ ধর্মের লোকদের বাড়িতে যে অস্ত্র ও বোমা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ সরকারিভাবে ফেরত নিতে হবে।
- রোহিঙ্গা নারী শিশু যুবকদের উপর যুগ যুগ ধরে গোপনে প্রকাশ্যে যে গণহত্যা নারী ধর্ষণ করা হয়েছে তার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে হতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি থানায় থানায় ওআইসি এবং জাতিসংঘের শান্তি মিশণের ফোর্স নির্ধারিত থাকতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের মসজিদ মাদ্রাসা মক্তব তবলীগের মরকজসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের সকল প্রকার সরকারি ডিপার্টমেন্টে চাকরি দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের অধিকার দিতে হবে।
- পুরো আরাকানে ও বার্মার যেকোন স্থানে রোহিঙ্গাদের চলাফেরা করার অধিকার দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ভিসা পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাসপোর্ট অফিস আরাকানের ভেতরে হতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের বিদেশ গমনাগমণের সুযোগ দিতে হবে।
- কোন মামলা ছাড়া পুলিশসহ যেকোন বাহিনী অনর্থক রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে চেক করার নামে ঢুকতে পারবে না।
- রোহিঙ্গা আলেম ওলামাদের পাঞ্জাবী পায়জামা টুপি পরার ক্ষেত্রে বাধা না দেয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় কাজে বাধা দিতে পারবে না।
- গবাদিপশু হাঁস-মুরগী পালনে কোন ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে না।
ব্যানারে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই, আমাদের অধিকার আমরা চাই, মারামারি নয়, হানাহানি নয়, খুনাখুনি নয়, অধিকার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’
লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফেজ মো. আয়ুব বলেন, ‘আজ ঘুম থেকে উঠে সকালে দেখি আমার বাসার বাইরে এ ব্যানার। কে বা কারা এটা লাগিয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না’। ক্যাম্পের প্রবীণ মাস্টার আবদুল জব্বার এবং মাস্টার আবদুল মতলবও একই মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ-উখিয়ার সাবেক এমপি ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন ‘এসব ভাল লক্ষণ নয়।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।