রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞের দুই বছর পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সীমিত আকারে আশার আলো দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত বলতে গেলে ওই প্রদীপ নিভে গেছে। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হননি।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা বলেছেন, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ অন্যান্য দাবিদাওয়া মেনে নিলেই কেবল ফিরে যাবেন তারা।’
রোহিঙ্গাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ‘মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলার নিরাপত্তা, ফেলে আসা সম্পত্তি ফেরত ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’ মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে যথাযথ আশ্বাস না পাওয়ায় রোহিঙ্গারা সেখানে ফেরত যাননি।
এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রথম সময়সীমা ঠিক হয়েছিল। তখনও মিয়ানমারের ছলচাতুরি এবং রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় তাদেরকে রাখাইনে পাঠানো যায়নি। দ্বিতীয় দফায় কেউ রাখাইনে যেতে না চাওয়ায় এবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা দৃশ্যত ব্যর্থ।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে ত্রাণ, দুর্যোগ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেছেন: রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে না চাইলেও সাক্ষাতকার নেয়া চলমান থাকবে। আমরা মনে করি, শুধু সাক্ষাতকার নেয়া নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। রোহিঙ্গারা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেসব শর্ত পূরণে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে।
তার এ বক্তব্যের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যে কথা বলেছেন তাও যথোপযুক্ত। তিনি বলেছেন: সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকার পরও প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার দায় মিয়ানমারের। আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে এ কারণে একমত পোষণ করছি যে রোহিঙ্গাদের শর্ত পূরণ করার দায় মিয়ানমারের।
এরপরও তিনি বলেছেন: নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গা নেতাদের কয়েকজনকে রাখাইনে পাঠানোর প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নমনীয় ভূমিকার বদলে আরও কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বরাবরের মতো বলতে চাই, যেকোনো উপায়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের দেয়া শুধু ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার তালিকা নয়, রাখাইন থেকে আসা প্রায় ১১ লাখ অর্থাৎ সব রোহিঙ্গাকে নিজ ভূমিতে ফেরত নিতে হবে।
একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো পক্ষ প্রত্যাবাসন বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন: ক্যাম্পে যারা প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি না থাকলে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে বেকায়দায় পড়তে বলেই আমাদের শঙ্কা। তাই এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি।
বাস্তবতা হলো রোহিঙ্গাদের দেশ হচ্ছে মিয়ানমার, তাদেরকে স্বদেশে ফিরতেই হবে।