জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কী পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দরকার? আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, শুধুমাত্র আগামী ছয় মাসে তাদের জন্য প্রয়োজন ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরপরও তাদের রাখতে হলে আরো হাজার হাজার কোটি টাকার ত্রাণ সহায়তা দরকার।
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বিগত এক মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে আরো আগে থেকেই অনেক রোহিঙ্গা ছিল। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে সামলাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। বিভিন্ন দেশও পাঠাচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে জাতিসংঘ ছয় মাসের জন্য জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখতে ৭৭ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল।ওই মাসের শেষদিকে এসে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক বা ৩৬.৪ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা মিলেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জাতিসংঘ পরে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের আবেদন জানায়।
অন্যদিকে, ৭৬ মিলিয়ন ডলারের জন্য আবেদন জানিয়েছে ইউনিসেফ। ইউএনএইচসিআর হিসাব করে বলেছে, ছয় মাসের জন্য তাদের প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা বিদেশী সংস্থাগুলোও বলছে, সেখানে আরো বেশি সহায়তার প্রয়োজন।
রেড ক্রিসেন্টের পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশন্সের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইকরাম ইলাহী চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, আগে থেকেই রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজার এলাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গার সংখ্যা। সেসঙ্গে নানা ধরনের জিনিসের প্রয়োজন বাড়ছে। ‘এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শুধু খাবার নয়, প্রয়োজন রয়েছে আশ্রয়, পোশাক, হাইজিন কিট, স্যানিটেশন, পানি, ওষুধ ইত্যাদির।’
রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক অনেক ত্রাণ আসছে উল্লেখ করলেও তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ত্রাণ বাংলাদেশে রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় ৫০ শতাংশ।
সমস্যা সমাধানে নানান পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডব্লিউএফপি, আইওএম, ইউএনএইচসিআর এবং এ ধরনের বিদেশি ও দেশি বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, আরো সহায়তার পরিকল্পনা আছে।
‘একা হাতে এত এত রোহিঙ্গাকে সহায়তা করা সম্ভব না,’ উল্লেখ করে তিনি জানান: বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের জন্য ৩,০০০ একর জমিতে সুপার ক্যাম্প গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত নানান ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তবে এত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ম্যানেজমেন্টটাও খুব কঠিন বিষয়। তাই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের দেওয়া ত্রাণ সহায়তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে এবং হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ যথেষ্ট: সরকার
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে তা যথেষ্ট। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, আমাদের কাছে যে ত্রাণ রয়েছে তা মোটামুটি পর্যাপ্ত। এছাড়া ডব্লিউএফপি আমাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
‘রোহিঙ্গা সমস্যা এরপরও অব্যাহত থাকলে তাদের সেই সহায়তা অব্যাহত থাকবে,’ বলে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শাহ্ কামাল বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রথমতঃ চায় রোহিঙ্গারা দ্রুত আবার মিয়ানমারে ফেরত যাক, তাহলেই দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তারপরও সেখানকার খাদ্যগুদামে এখন পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রয়েছে।
‘ফলে খুব একটা সমস্যা হবে না।’